হাজতের নাম শুনলেই চোখে ভাসে ময়লা, দুর্গন্ধ আর বদ্ধঘরের চিত্র। তবে ঢাকা রেলওয়ে থানার হাজতখানা এই ধারণা বদলে দেবে। আধুনিক নির্মাণশৈলী, পরিষ্কার টয়লেট, বসার জায়গা আর পাশেই একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি নিয়ে ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের হাজতখানা।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন সময় চুরি,ছিনতাই, মাদক, কালোবাজারিসহ নানা অভিযোগে সন্দেহভাজনদের আটক পুলিশ। তাদের রাখা হয় ঢাকা রেলওয়ে থানার হাজতখানায়। যা আগে ছিলো নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর।
তবে সম্প্রতি থানার হাজতখানাটি সাজানো হয়েছে নতুন করে। হাজতখানার ভেতরের ছোট লাইব্রেরি দেখে বোঝার উপায় নেই এটি থানার হাজতখানা।
ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার বলেন, এই উদ্যোগের ফলে মানুষের মনে পরিবর্তন আসবে। মানুষ অন্যায় থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করবে।
এছাড়া সেবাগ্রাহক আর খোদ পুলিশের পড়ার জন্য থানায় রাখা হয়েছে বইয়ের শেলফ।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুক হক, হাজতে আটক কয়েদীরা বই পড়ে নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারবে। এছাড়া, বই জ্ঞানের বাহন। কর্মরত পুলিশ সদস্যরা এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে।
স্টেশনের আট নাম্বার প্ল্যাটফর্মে পানি আর ছোটদের জন্য চকলেটের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
এসব সেবা পেয়ে খুশি স্টেশনে চলাচলকারীরা।
সেবা গ্রহীতারা জানান, এটা একটা ভাল উদ্যোগ। এতে পুলিশের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব দুর হবে।
এই থানার হাজতখানার একটি দেয়ালে লেখা আছে উৎসাহ জাগানো কবিতার কিছু লাইন, তার নিচেই তাকের মধ্যে সাজানো গোটা পঞ্চাশেক বই। ভেতরটাও বেশ পরিপাটি আর পরিচ্ছন্ন।
ওসি মাজহারুল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এখানে যারা আসামি হিসেবে আসেন, তাদের আমরা শুধুমাত্র আসামি হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি। একজন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার, আমরা সেভাবেই রাখার চেষ্টা করি। এইরকম একটা পরিবেশে এসে, দেখে, থেকে একজন অপরাধীর মনে আপনা থেকেই ভাল চিন্তা জেগে উঠবে।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সে ভাববে, অপরাধ করার পরেও আমাকে এত সুন্দর একটা পরিবেশ দেওয়া হয়েছে, আমি কেন অপরাধ করব? এমন চিন্তা থেকেই গত পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে থানাটির আধুনিকায়নের কাজ হয়।’
হাজতখানার ভেতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পুতুলনাচের ইতিকথাসহ ধর্মীয় নীতিমূলক বেশ কিছু বই দেখতে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের বই সংগ্রহের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘সামনে এটা নিয়ে আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে। আমাদের এইখানে জায়গা তেমন বেশি না। অল্প জায়গার মধ্যেই আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি।’
এদিকে, এই থানায় কী ধরনের মামলার আসামিরা বন্দি থাকেন জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, ‘খুব বড় ধরনের মামলার আসামিদের এই হাজতখানায় রাখা হয় না। রেলওয়েতে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো অপরাধে হওয়া মামলার আসামিদের এইখানে এনে রাখা হয় এবং একদিনের বেশি এখানে রাখা হয় না।’
রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা রেলওয়ে থানায় বর্তমানে চার থেকে পাঁচজন বন্দি সহজেই থাকতে পারেন। কর্তৃপক্ষের চেষ্টা থাকলে ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো যাবে।
কোনো সেবাপ্রার্থী যেন মনঃক্ষুণ্ন না হন, সেদিকে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবকাঠামোয় পরিবর্তন আনা হয়েছে। থানার সামনে সাধারণ মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশুদের জন্য চকলেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।