বাংলাদেশ, বিবিধ, জেলার সংবাদ, লাইফস্টাইল

শ্বশুরবাড়ির সবাইকে কাঁদিয়ে নিজ দেশের পথে জার্মান জামাই

মোমেনুল ইসলাম মমিন

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১৫ই মে ২০২২ ১০:১৩:২৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

লালমনিরহাটে শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে জার্মানী থেকে ছুটে আসা জামাই প্যাট্রিক নিজে কেঁদে ও সবাইকে কাঁদিয়ে ১৫ দিনের সফর শেষে জার্মানীতে ফিরে গেছেন।

প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করলেন প্যাট্রিক ও ইভা দম্পতি। প্যাট্রিকের আন্তরিকতা ও সরলতায় মুগ্ধ লালমনিরহাটবাসী।

২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানিতে যান মৌসুমি আক্তার ইভা। সেখানে গিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন। ওই সময় রেস্টুরেন্টে আসা-যাওয়া ছিল অর্থনীতিতে পিএইচডি করা ড. প্যাট্রিক মুলারের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অতঃপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ইভা বিয়ে করেন প্যাট্রিককে। 

চার বছরের সংসার জীবনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের রূপ দেখে মুগ্ধ হয় প্যাট্রিক। তাই তিনি প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে ২৯শে এপ্রিল ছুটে আসেন বাংলাদেশে। ধুমধাম করে তাদের বরণ করেন লালমনিরহাট শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার মানুষ। 

বিদেশি জামাই প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে আসায় রান্না করা হয় চাইনিজ খাবার। কিন্তু জার্মান জামাইয়ের আবদার তিনি বাঙালি খাবারের স্বাদ নেবেন। পরে জামাইয়ের আবদার মেটাতে মাছ-মাংসসহ নানা ধরনের খাবার রান্না করা হয়। জার্মান জামাইও চামচ ব্যবহার না করে হাত দিয়ে খাবারের স্বাদ নেন। 

শুধু তাই নয়, ঈদের পরের দিন আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের একটি গ্রামে যান। সেখানে তিনি গ্রামের মানুষদের সঙ্গে ধান কেটেছেন ও মাড়াই করেছেন। পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরার পাশাপাশি বাইসাইকেল চালিয়েছেন, খেয়েছেন পান। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে বাংলা গানের শুটিংও করেছেন। আর এসব দেখে মুগ্ধ হয় ইভার পরিবারের লোকজন।

প্যাট্রিক বলেন, ‘ফেসবুক ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশের গ্রামের রঙ দেখেছি। বাস্তবে এত সুন্দর হবে ভাবতে পারিনি। এ দেশের মানুষ এতটা ভদ্র বলে শেষ করা যাবে না। ‌বিশেষ করে গ্রামের মানুষরা যেভাবে অতিথি আপ্যায়ন করেছেন তা কোনো দিন ভোলা যাবে না।’

মৌসুমি আক্তার ইভা বলেন, ‘প্যাট্রিক একজন ভালো মনের মানুষ। তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আমি খুশি। গ্রামগঞ্জ ঘুরে প্যাট্রিক বলেন, ফেসবুক ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশের গ্রামের রূপ দেখেছি। বাস্তবে এত সুন্দর হবে ভাবতে পারিনি। এ দেশের মানুষ অনেক ভদ্র।’

প্রায় ১৫ দিনের শ্বশুরবাড়ি সফর শেষে শনিবার (১৪ই মে) বিদায় নেন ড. প্যাট্রিক মুলার। শ্বশুরবাড়ি থেকে বিদায় বেলার দৃশ্য ছিল বেদনার। বাংলার মানুষের মায়া ত্যাগ করায় নিজে যেমন কেঁদেছেন, শ্বশুরবাড়ি ও এলাকার লোকজনকেও কাঁদিয়েছেন তিনি। মেয়ে জামাই আর নাতিকে বিদায় দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার শ্বশুর-শাশুড়ি।

শনিবার (১৪ই মে) দুপুরে পরিবার নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন এ দম্পতি। রবিবার (১৫ই মে) সকাল ৬টার ফ্লাইটে তারা জার্মানিতে রওনা হয়েছেন।

আরও পড়ুন