জাতীয়, অপরাধ, প্রবাস

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার গেমিং চক্র!

বুলবুল রেজা

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ২০শে জুন ২০২০ ০৩:১৫:২০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বেলুন, ফাইবার কিংবা কাঠের নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই করা হয় বিপদযাত্রা। ওজন কমাতে দিনে দেয়া হয় একবেলা খাবার।

লিবিয়া হয়ে অবৈধ পথে ইতালিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমানোর প্রক্রিয়াকে দালালরা বলে গেমিং। যারা গেমে যেতে রাজি হয় তাদের ওজন কমানোর জন্য দিনে মাত্র একবেলা খাবার দেয়া হয়। পরে অনুকূল আবহাওয়া দেখে তুলে দেওয়া হয় বেলুন, ফাইবার অথবা কাঠের নৌকায়। লিবিয়ান কোস্টগার্ড অথবা নৌবাহিনীর নজর পড়লে আবারো জিম্মিদশা।  আর নৌকা ডুবলে সলিল সমাধি।

অবৈধ পথে নানা চড়াই-উৎরাই পাড় হয়ে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে পৌঁছোয় অভিবাসীরা।  এদের বেশিরভাগেরই টার্গেট ইতালি যাওয়া।  স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস কিংবা সাইপ্রাসও থাকে স্বপ্নের দেশের তালিকায়। 

যারা ইতালিসহ ইউরোপের এসব দেশে যেতে চায় দালালরা তাদেরকে নিয়ে যায় জুয়ারা ঘাটে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় গেমিং।  

লিবিয়ায় ক্যাম্পের মালিক বাদশা ফকির বলেন, কেউ যদি ঘাটে যেত তাহলে যে দালালরা আছে তাদেরকে মেরাজের কাছে পাঠায়া দিতাম। এছাড়া আমাকে যাদের কাছে পৌঁছায়া দিতে বলত আমি তাদের কাছে পৌঁছায়া দিতাম।চোরাই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার নামই গেম।

সব শর্ত পূরণ হলে তুলে দেয়া হয় নৌকায়। বেলুন, ফাইবার এবং কাঠ এই তিন ধরণের নৌকায় পাড়ি দেয়া যায় ভূমধ্যসাগর। ওজন কমানোর জন্য নৌকায় তুলে দেওয়ার কয়েকমাস আগে দিনে মাত্র একবার খাবার দেওয়া হয়।  

লিবিয়ায় ক্যাম্পের মালিক বাদশা ফকির বলেন, মাল্টা, ইতালি এবং টুনেস এই তিন জায়গার আবহাওয়া ভালো থাকবে সেদিনই গেম ছাড়া হয়।প্লাস্টিকের নৌকায় ১২০জন, ফাইবার নৌকায় ৬০ থেকে ৭০ জন এবং কাঠের নৌকায় ১৬০ থেকে ১৮০ জন পর্যন্ত নেয়া যায়।যে যাত্রী সেই ড্রাইভার। আলাদা কোন ড্রাইভার থাকে না।

এবার শুরু হয় আসল গেম। বাংলাদেশি দালালরা লিবিয়ান দালাল এবং কোস্টগার্ডদের জানিয়ে দেয় কোন নৌকা প্রথম, কোনটি দ্বিতীয় এবং কোনটি তৃতীয় বারের মত পাড়ি দিচ্ছে সাগর। প্রথম আর দ্বিতীয় দফার যাত্রীদের তুলে নিয়ে আসে কোস্টগার্ড।  

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, জাহাজে করে ইতালিতে নিয়ে যাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার পর দেখা যায় সব বাতাসের নৌকা। এছাড়া লিবিয়ার দালালদের বলে দেয়া হয় কয়টা নৌকা ছাড়া হয়েছে, পরে তাদের ধরে এনে ক্যাম্পে আটক করা হয়। এ কুচক্রি লোকগুলো বাংলাদেশি দালালদের কাছে দুই তিন হাজার দিনারে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে। 

জুয়ারা ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে দশ বাংলাদেশি দালাল। তাদের সাথে আঁতাত রয়েছে লিবিয়ান দালাল, কোস্টগার্ড ও মিলিশিয়াদের। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে কেউ কেউ সক্ষম হয় স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যাওয়ার। আর কপাল খারাপ হলে সাগরেই ডুবে যায় স্বপ্ন। 

আরও পড়ুন