লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য

শরীরে আয়রনের অভাব হলে যা করবেন

আবু খালিদ

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১০ই ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪০:৪০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

আয়রন আমাদের শরীরের অন্যতম অতি প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। রক্তের লোহিত কণিকা তৈরির কাঁচামাল। এর অভাবে লোহিত কণিকা তৈরি হতে পারে না। তাই রক্তশূন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ আয়রনের ঘাটতি। কিন্তু আয়রন শুধু রক্তকণিকা তৈরি করে না, দেহের শক্তি উৎপাদন থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের স্নায়ুপ্রবাহও নির্ভর করে পর্যাপ্ত আয়রনের উপস্থিতির ওপর। তাই দেহে আয়রনের ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে বহুবিধ সমস্যা। শিশুর সুস্থ মস্তিষ্কের বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরে মিনারেলের অভাব দেখা দিলে আয়রনের অভাব দেখা যায়। আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। এছাড়া রক্তে এক ধরনের ব্লাড সেল থাকে যা রক্তে অক্সিজেন সঞ্চালনে সাহায্য করে। আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া হয়। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও কমে যায়।

 

আয়রনের ঘাটতির প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া, আয়রন শোষণে সমস্যা এবং রক্তের ক্ষয়। উপরে উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আয়রনকে হ্রাস করতে পারে।

 

আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে শরীর হঠাৎ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত চুল পড়লেও আয়রনের ঘাটতি হতে পারে। শ্বাসকষ্ট হতে পারে বা মাথা ঘোরা এবং মাথা ঝিমঝিম বোধ হতে পারে। রক্তে আয়রনের অভাব হলে সৃষ্টি হতে পারে নানা জটিলতার। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনলেই শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

 

আমাদের খাদ্য থেকে আয়রন দুটি আকারে আসে; হিম আয়রন এবং নন-হিম আয়রন। হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অনুসারে হিম আয়রন নন-হিম আয়রনের চেয়ে শরীর দ্বারা ভালো শোষিত হয়।

 

আয়রন রয়েছে এমন খাবার যেমন- কলিজা, মাছ, হাঁস-মুরগির মাংস, সবুজ শাকসবজি; বিশেষ করে পালংশাক, কুমড়োর বীজ, ব্রকলি, ড্রাই ফ্রুট (যেমন কিশমিশ), অ্যাপ্রিকট, বাদাম, ডালিম, কলা, আপেল ইত্যাদি খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। এ ধরনের খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি খেলে তা শরীরে হিম আয়রন এবং নন-হিম আয়রনের শোষণকে উন্নত করে।

 

অধিকাংশ মানুষের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে ডাল। আয়রনে সঙ্গে ডাল থেকে পাবেন ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক। এছাড়াও এক কাপ ছোলায় রয়েছে তিন থেকে পাঁচ মিলিগ্রাম আয়রন।

 

আয়রনের খুব চমৎকার একটি উৎস হলো খেজুর। এর মধ্যে আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬। খেঁজুরের মধ্যে রয়েছে আঁশ। এটিও প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।

 

ডার্ক চকোলেট আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এতে প্রচুর আয়রন রয়েছে। ডার্ক চকোলেট শুধুমাত্র আয়রনের ঘাটতিই পূরণ করেনা, স্ট্রেস কমায় এবং ত্বক ও চুল ভালো রাখে।

 

প্রতিদিন পালং শাক, সবজি, স্যুপ খান। পালং শাকে আয়রন রয়েছ প্রচুর। এছাড়াও ছানা বা পনির, ডিম, চিকেন, কলিজা খেলেও শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন পাবে।

 

প্রতিদিন সকালের খাবারের সঙ্গে কিশমিশ, অ্যাপ্রিকট, কাজু বা আমন্ড খেতে পারেন। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা শরীরকে আয়রন শুষে নিতে সাহায্য করে। সকালের খাবার ছাড়াও দিনের অন্য সময় এক মুঠো বাদাম আপনার আয়রনের ঘাটতি মেটাতে পারে।

 

সয়াবিন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়ামের ভালো উৎস। নিয়মিত সোয়বিন খেলে হার্টের অসুখ, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। ভালো থাকে হাড়ের স্বাস্থ্যও।

 

সাধারণত আয়রনের ঘাটতি হলে মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে পূরণ করা যায়। রক্তশূন্যতা ছাড়া দেহে আয়রন ঘাটতিতে রক্ত দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। বরং তা দেহের জন্য ক্ষতিকর। আয়রন ঘাটতির সঠিক কারণ বের করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।

আরও পড়ুন