মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের কথা ভাবেননি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ ঘটনায় প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচিয়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন সেই বীর শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী (৪৬)।
সোমবার (২১শে জুলাই) রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে পুরো দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা যায়, দুর্ঘটনার দিন প্রশিক্ষণ বিমানটি কলেজে আছড়ে পড়ার সাথে সাথেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। সেই মুহূর্তে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেহেরীন চৌধুরী ক্লাসরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের দ্রুত বাইরে বের করে আনতে শুরু করেন। প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বের করে দিতে পারলেও নিজে আর সময়মতো বের হতে পারেননি। আগুনের তাপে তার শরীরের একটি বড় অংশ মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার রাতে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। ইনস্টিটিউটের একটি সূত্র তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
উদ্ধার হওয়া মাইলস্টোন কলেজের এক ছাত্রীর বাবা সুমন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ম্যাডাম অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল আমাদের বলেছে, ম্যাডামের জন্যই অন্তত ২০ জন ছাত্রছাত্রী সেদিন প্রাণে বেঁচে গেছে। আমরা তার এই ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।’
ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানে থাকা এক সদস্যও জানান, শিক্ষিকা মেহেরীনের অসীম সাহসিকতার কারণেই অনেকগুলো তাজা প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ওই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন দগ্ধ হয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে আত্মাহুতি দেওয়া শিক্ষিকা মেহেরীনের মৃত্যু সেই শোকাবহ ঘটনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করলো।
ডিবিসি/এনএসএফ