শীত মানেই উৎসব আর ছুটির আমেজ। অনেকেই বছর শেষে শীতকালীন ছুটিকে বেছে নেন ভ্রমণের জন্য। যারা সারা বছর ব্যস্ত থাকেন চাকরি কিংবা অন্যান্য কাজের সূত্রে, তাঁদের অনেকেই বছরের এই শেষ সময়ে ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ছুটিতে ঘোরাঘুরিরও পরিকল্পনা থাকে অনেকের।
শীতকালে প্রকৃতি তার চিরাচরিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায়। সেই সৌন্দর্যের মোহে আবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ শিশির ভেজাপথ হেঁটে গেলেও ভর করবে না কোনো ক্লান্তি। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টিতে দেশজুড়ে পড়ে যায় বনভোজনের ধুম।
দেশের মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বেশ কিছু স্থান। বছরজুড়েই সেসব স্থানে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে কয়েকটি স্থান আছে যেখানে শীতে পর্যটকরা বেশি ঘুরতে যান।
চায়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয়। শীতে শ্রীমঙ্গল গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বেশ কয়েকটি স্থানে। সেখানকার বাইক্কার বিলে গেলে দেখতে পাবেন অতিথি পাখিদের। এছাড়া ঘুরতে পারবেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। লাউয়াছড়া উদ্যান ঘুরে যেতে পারেন নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, আদি নীলকণ্ঠ টি কেবিন (সাতরংয়ের চায়ের জন্য বিখ্যাত), সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা ও চা জাদুঘরে।
ভ্রমণের বিষয় এলে সমুদ্রের কথা আসবে বেশ আগে আগেই। অনেকের কাছেই ছুটি কাটানোর মোক্ষম স্থান সমুদ্রের পাড়। পড়ন্ত বিকেলে শীতের আমেজ উপভোগ করতে পারেন কক্সবাজারের সমুদ্রের পাড়ে। সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
বাংলাদেশের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে স্থানীয়রা নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণের মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির অবস্থান কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। একদিকে নিঃসীম নীল দিগন্তের কোণে ফেনিল সমুদ্রের মিশে যাওয়া, অন্যদিকে সারি সারি নারিকেল গাছ ঘেরা সাধারণ জীবন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে।
শীতকালীন বন্ধে ছুট দিতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। এখন বেশ বিলাসবহুল নৌকা মেলে হাওরের বুকে। এসব হাউস বোটের প্রাইভেট রুমে আয়েশ করে বই পড়তে পড়তে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিতে পারেন অবসর সময়।
বাংলাদেশের হিমালয় কন্যাখ্যাত জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশে জেলাটির ভৌগলিক অবস্থান হওয়ায় পঞ্চগড়কে বলা হয় হিমালয় কন্যা। কাঞ্চনজঙ্ঘা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। প্রতিবছর শীতের সময় বাংলাদেশ থেকে দেখা মেলে এই পর্বতের। সে জন্য অবশ্য ঘন কুয়াশা শুরু হওয়ার আগেই অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতেই আপনাকে যেতে হবে সেখানে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে দেখা যাবে সমতলের চা–বাগান। আপনি যদি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলো ছাড়াও ঘুরতে চান তাহলে ঘুরতে পারেন পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল, ঘুরতে পারেন নতুন করে গড়ে ওঠা কমলা, মাল্টা–ড্রাগন ফলের বাগান। ঘুরতে পারবেন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থান।
যেতে পারেন বগুড়া বেহুলা লখিন্দরের বাসরঘর দেখতে। সঙ্গে মহাস্থানগড় আর প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরী। একটু দূরেই দেখতে পাবেন প্রাচীন পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার। এ ছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় পাবেন দেশের বড় শিবমন্দিরের দেখা। সেখানে আরও পাবেন ছোট ছোট টেরাকোটাশোভিত মন্দির। একসঙ্গে এতগুলো টেরাকোটাসজ্জিত মন্দির আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
বান্দরবান জেলার আলীকদম থানার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত একটি পাহাড় মারায়ন তং। ত্রিপুরা , মারমা, মুরংসহ বেশকিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির বসবাস এই পাহাড়ে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬৪০ ফুট অবস্থায় মারায়ন তংয়ের চূড়া অবস্থিত।শীতের এই সময় সাদা মেঘে ঢেকে যায় পাহাড়ের চূড়া। আপনার মনে হবে আপনি সাদা মেঘের জমিনের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। চাইলেই এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন মারায়ন তং।
ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একটি দ্বীপ কুকরি মুকরি। বর্ষায় ডুবে থাকলেও শীতে এই চর ভেসে ওঠে। বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বৃহৎ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এই দ্বীপ ৷ নাম না জানা অসংখ্যা গাছ ও সারি সারি নারিকেল গাছ সাথে বিশাল বালুময় চর দেখলে আপনার মনে হবে সৈকতে দাঁড়িয়ে আছেন। চাইলে ক্যাম্পিং করে রাত্রিযাপনও করতে পারেন দ্বীপে।
মণপুরা দ্বীপ নামের বিচ্ছিন্ন ভূমিটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং হরিণ দেখার জন্য পর্যটকদের প্রিয় স্থান। মেঘনা নদীর ভেতরে ৫০০ মিটার পর্যন্ত স্থাপন করা মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের ভীড় থাকে। দ্বীপ ভ্রমণে এসে দর্শনার্থীরা চৌধুরী প্রজেক্টের মাছের ঘের আর সারি সারি নারিকেল গাছের বিস্তৃত এলাকাতেও ঘুরতে আসেন। নদীর ধারে সাইক্লিং কিংবা সবুজের মাঝে ক্যাম্পিং-এর জন্য সেরা জায়গা মনপুরা দ্বীপ।
বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে আছে নদীনালা, বিল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার’সহ বিচিত্র সব পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে আছে নদীনালা, বিল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার’সহ বিচিত্র সব পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এছাড়াও সুন্দরবন গেলে দেখবেন জামতলা সৈকত, মান্দারবাড়িয়া সৈকত, হীরণ পয়েন্ট, কটকা বিচ ও দুবলার চর।
ঢাকার বাইরে যাওয়ার মতো সময় বের করতে না পারলে একদিনের ছুটিতে ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন রিসোর্ট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পূর্বাচল ও গাজীপুরে বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। ছুটি রিসোর্ট, সারাহ রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টসহ আরও অনেক রিসোর্ট পেয়ে যাবেন ঢাকার অদূরেই।