বিবিধ, লাইফস্টাইল

শীতের সকালে এককাপ গরম চা!

Faruque

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০০:০৬ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

দিনের শুরুতে এক কাপ চা না হলে দিনটিই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় অনেকের। শীতের দিনে এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি দেখা দেয়। কারণ শীতে গরম যেকোনো পানীয় বেশি উপাদেয়। এসময় জমিয়ে দুধ চা খেতে বেশ লাগে। তার সঙ্গে যদি যোগ হয় এলাচ-দারুচিনি, তাহলে তো কথাই নেই! প্রতিদিন সকালে এক কাপ দুধ চা খেতে আপনার ভীষণ ভালো লাগতেই পারে।

কিন্তু সকালে খালি পেটে দুধ চা খেলে কী হয় তা জানেন কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

ভারতের টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের সঙ্গে দুধ মেশানো হলে দুধে থাকা প্রোটিনগুলো চায়ের যৌগগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হয়, এর ফলে ওজন কমতে পারে বলে মনে করা হয়। আপনি যদি সকালে খালি পেটে দুধ চা খান তবে আপনার বিপাক সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়াও খালি পেটে এই চা খাওয়ার কারণে হতে পারে গ্যাসট্রিকের সমস্যা, বাড়িয়ে দিতে পারে আলসারের ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা পানের অভ্যাস অতিরিক্ত হওয়া ভালো নয়। চা পাতায় থাকে ট্যানিন নামক যৌগ। এটি অত্যন্ত অম্লীয়। খালি পেটে বা অতিরিক্ত চা খেলে এই ট্যানিনগুলো আমাদের পেটের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে হতে পারে পেটব্যথা। এটি বমি বা বমি বমিভাবের কারণ হতে পারে। সেইসঙ্গে দেখা দিতে পারে পেট ফাঁপার মতো সমস্যা। তাই দুধ চা খেতে যতই পছন্দ করুন না কেন, প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস না করাই ভালো। 

শীতের সকালকে আরও আরামদায়ক করতে এক কাপ দুধ চা আপনার কাছে উপাদেয় মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই পানীয় উদ্বেগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি হতে পারে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, হঠাৎ ঝাঁকুনি বা অস্থিরতার অনুভূতির কারণ।

বর্তমানে সবচেয়ে মারাত্মক এক ঝুঁকির নাম ডায়াবেটিস। আমাদের জীবনাপন, বংশগতি ইত্যাদি হতে পারে এই রোগের কারণ। যে কারণে খাবারে নিয়ন্ত্রণ করে এটি অনেকটাই দূরে রাখা যায়। এমনকিছু খাবার আছে যেগুলো হতে পারে ডায়াবেটিসের কারণ। আপনি যদি নিয়মিত দুধ চা খান তবে বাড়তে পারে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। 

প্রতি কাপ দুধ চায়ে ক্যাফেইন থাকে প্রায় ৪৭ মিলিগ্রাম। তাই আপনি যদি প্রতি সকালে এক কাপ করে দুধ চা খেয়ে থাকেন, সেটি আপনার ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। দুধ চা খাওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যেই এই ক্যাফেইন প্রবেশ করে রক্তে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমের আগে দুধ চা খাওয়া একদমই উচিত নয়।

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সচেতনতামূলক তথ্যের জন্য গ্রিন টির দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। বিশেষত যারা লাল চা পান করেন, গ্রিন টিকেও পানীয়ের তালিকায় রাখছেন স্বাচ্ছন্দে। আবার অনেকেই তিন ধরণের চা-ই নিয়মিত পান করেন সময় ও সুযোগ বুঝে।

কিন্তু এই তিন প্রকারের চায়ের মাঝে কোন চা সবচেয়ে উপকারী ও স্বাস্থ্যকর? 

এক্ষেত্রে লাল চা ও গ্রিন টি অগ্রাধিকার পাবে। উভয় চা থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্লোরাইড পাওয়া যাবে, কিন্তু দুধ চায়ের ক্ষেত্রে হতে হবে হতাশ। গ্রিন টি ও লাল চা দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অবশ্য গ্রিন টি ও লাল চায়ের মধ্যে ফ্লোরাইড বেশি পাওয়া যাবে গ্রিন টি থেকে.

এক্ষেত্রেও দুধ চা পেছনের দিকেই থাকবে এবং সামনের দিকে থাকবে গ্রিন টি ও লাল চা। এই দুই ধরণের উপকারী চায়ে পাওয়া যায় ক্যান্সার প্রতিরোধকারী শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। অন্যদিকে দুধ চায়ে মিশ্রিত দুধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে শরীরে শোষিত হতে বাধাপ্রদান করে। তবে ফ্লোরাইডের উপস্থিতির মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতির ক্ষেত্রেও গ্রিন টি সবচেয়ে বেশি ভালো। গ্রিন টি থেকে পাওয়া যায় ক্যাটেচিন নামক ফ্ল্যাভনয়েড। যা ক্যান্সার কোষের জিনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

লাল চা গ্রিন টি- উভয় ধরণের চা থেকেই পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যাফেইন। তবে লাল চায়ের তুলনায় গ্রিন টিতে ক্যাফেইন মাত্রা থাকে কিছু কম। যদি আপনি সকাল বেলা ঘুমভাব দূর করে পুরোদমে কাজ শুরু করতে চান তবে লাল চা হবে সবচাইতে ভালো পছন্দ। যদি লাল চা না থাকে তবে গ্রিন টিও পান করতে পারেন। তবে দুধ চায়ের ক্ষেত্রে ক্যাফেইনের মাত্রা হবে একেবারেই কম এবং লাল চা পানে যেমন রিফ্রেশিং ভাব তৈরি হয়, দুধ চা থেকে তেমনটা পাওয়া যাবে না।

হৃদযন্ত্রকে যদি সুস্থ রাখতে চান তবে তিন ধরণের চায়ের মাঝে লাল চা হবে সবচাইতে উৎকৃষ্ট চা। তবে গ্রিন টিও ব্লাড ভ্যাসেলের চাপকে হ্রাস করতে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। অন্যদিকে লাল চা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তবে দুধ চা হৃদযন্ত্রের উপর উপকারি কোন ফেলে কিনা, এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এক্ষেত্রে বলা যায়, প্রতিদিনের কাপের পর কাপ চা পানের অভ্যাসের ক্ষেত্রে লাল চা নতুবা গ্রিন টি পানের অভ্যাস গড়ে তোলাই হবে সর্বাপেক্ষা উত্তম। স্বাদের বিবেচনায় দুধ চা সবসময় এগিয়ে থাকলেও, নিয়মিত দুধ চা পানের পরিবর্তে কদাচিৎ পান করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন