জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনে বিএনপির আপত্তি থাকলেও একমত এনসিপি। আবার এতে আংশিক দ্বিমত থাকলেও সহমত জামায়াতে ইসলামীর। এরকম আরও অনেক ইস্যুতেও ভিন্ন মত রয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্কার নিয়ে কমিশনের কাছে স্ব-স্ব দলের প্রস্তাব চাপালে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হবে। যাতে দেরি হতে পারে নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব।
চারিদিকে চলছে রাজনীতির নানা আলোচনা। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ইস্যু সংস্কার। আর সেই সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রশ্ন উঠছে সংস্কার নিয়ে কতটা একমত হতে পারছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিছু কমন সংস্কার যেমন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংসদে দু’জন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দলের, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা-এসব কিছু প্রস্তাবে বিএনপি-জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির তেমন আপত্তি না থাকলেও অনেক বিষয়ে আছে দ্বিমত।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র-প্রস্তাবিত এমন সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে বিএনপি একমত নয়। কিন্তু এতে পুরোপুরি মত দিয়েছে এনসিপি, অন্যদিকে বহুত্ববাদ ছাড়া জামায়াতও এতে একমত পোষণ করেছে।
আবার জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন বা এনসিসি গঠনে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে যেমন বিএনপির আপত্তি আছে, তেমনি এ নিয়ে জামায়াতও একমত নয়। তবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করে 'নাগরিকতন্ত্র' ও 'জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ' করার প্রস্তাবে বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলো একমত নয়। তারা 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' নামই চায়।
বর্তমান সংবিধান বাতিল করে এনসিপি যে নতুন সংবিধান ও গণ পরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে তাতে আবার সায় নেই বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলোর। সরকারের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাবে প্রায় সব দলই আপত্তি তুলেছে। আগের পাঁচ বছর মেয়াদই বহাল রাখার পক্ষে তারা।
একই ব্যক্তি একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধানের পদে না থাকার বিষয়ে বড় আপত্তি বিএনপির। তবে জামায়াত বলছে, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি হলেও দলীয় প্রধান অন্য কেউ থাকতে পারেন।
উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া এবং ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট নিয়ে বিএনপির দ্বিমত থাকলেও ১০০ নারী আসনে প্রত্যক্ষ ভোটের প্রস্তাব করেছে এনসিপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলছেন, দলগুলো সংস্কার কার্যক্রমে অনেক বেশি আন্তরিক না হলে এটা বাস্তবায়নে কঠিন হবে।
অবশ্য সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না-সংবিধানের এমন ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনে কোন দলই একমত নয়। ঐকমত্য কমিশনের সবশেষ বৈঠকে একজন ব্যক্তি টানা দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একবার বিরতি দিয়ে ফের আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন বিএনপির এমন প্রস্তাবে- একই ব্যক্তি বিরতি দিয়ে সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন বলে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
সব মিলিয়ে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করতে চায়। মত-দ্বিমতের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে জুলাই চার্টার বা অঙ্গীকারনামাও তৈরি করবে কমিশন।
ডিবিসি/এএনটি