শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট নয়। সুখী দাম্পত্য পেতে দৈনন্দিন কাজকর্মে সঙ্গীকে সাহায্য করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রচলিত একটা কথা ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’; কিন্তু রমণীদের কেন সংসার সুখের করার সব দায়ভার! তাই ইদানীং আরও একটা লাইন যুক্ত হয়েছে—‘গুণবাণ পতি যদি থাকে তার সাথে।’ সত্যিই তো সংসার যদি দু’জনের হয় তাহলে দায়িত্ব তো দু’জনেরই হওয়া উচিত। কিংবা দু’জন কেন, সংসারে উপস্থিত সব সদস্যেরই উচিত সংসারটাকে সুখী করে তোলা। সুখী সংসারের মূলমন্ত্র ছাড় দেয়া। তাই একে অপরকে ছাড় দিতে হবে।
সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি ঠিক কী, তা খুঁজে চলেন অনেকেই। কিন্তু শুধু ভালবাসা, ধন-সম্পত্তি কিংবা যৌন মিলনের আনন্দই যথেষ্ট নয়। সুখী দাম্পত্য পেতে দৈনন্দিন কাজকর্মে সঙ্গীকে সাহায্য করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এমনই মনে করেন অধিকাংশ মানুষ।
সম্প্রতি আমেরিকার একটি সংস্থার করা সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রায় ৫৩ শতাংশ দম্পতি মনে করেন যে, দাম্পত্য সুখের রাখতে ভালবাসার সঙ্গে সমপরিমাণে প্রয়োজন গৃহকর্মের সুষম বণ্টন। এমনকি, প্রায় ৫০% দম্পতি মনে করেন, দৈনন্দিন কাজে সাহায্য না করা পরকীয়ার থেকেও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপর।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া দম্পতিদের ৭২ শতাংশই জানাচ্ছেন যে, তাঁদের দৈনন্দিন গৃহকর্মে অসাম্য রয়েছে। পুরুষের থেকে মহিলাদের মধ্যে সঙ্গীর কাজকর্ম নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে বেশি। সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে যে, অতিমারির সময়ে আগের থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে গৃহকর্মের সমস্যা। ৬০ শতাংশ দম্পতির মতে বাড়ির কাজকর্ম হাত মিলিয়ে করলে অনেক বেশি মজবুত হয় সম্পর্ক।
রাগ বেশিক্ষণ না রাখা :যে কোনো বিষয়ে হয়তো রাগ হতেই পারে। অনেক সময় বিষয়টি খুব ছোট হলেও রাগটা অনেক বড় হয়ে যায়। এটি কখনোই করা যাবে না। কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলে একে অপরকে বুঝিয়ে বলুন। কেন আপনি বিষয়টি মানতে পারছেন না, সেটি যুক্তি দিয়ে তুলে ধরুন অন্যের সামনে। দেখবেন রাগের থেকে এটি অনেক বেশি কার্যকর হবে।
সত্য কথা বলা :যেখানে যাই হোক না কেন, সেটির মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে সত্যতা এবং স্বচ্ছতা। পরিস্থিতির জন্য হয়তো অনেক কিছু করতে হতে পারে, সেটি না লুকিয়ে আপনার সঙ্গীকে বলে ফেলুন। যত কঠিনই হোক সত্য বলার জন্যই অনেক ভুলের ক্ষমা পাওয়া যায়।
প্রকাশ করা :অনেকেই আছেন নিজের অনুভূতিটি প্রকাশ করতে চান না অথবা পারেনও না। এতে আপনার সঙ্গীর মনে হবে তাকে লক্ষ্য করেন না। তাই কোন পোশাকে তাকে ভালো লাগে, কোনো কাজে খুশি হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সেটি বলে দিন। এতে সঙ্গে থাকা মানুষটি খুশি হবে। ঠিক তেমনিভাবেই কোনো কিছুতে কষ্ট পেলে বা খারাপ লাগলে সেটিও বলুন, এতে নিজেকে পরিবর্তন করতেও সাহায্য হবে।
একান্তে সময় কাটানো :অনেকেই একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস করেন। পরিবারের সদস্য বেশি থাকায় নিজের মতো করে খুব কম কাছে পান প্রিয় মানুষটিকে। তাই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন দু'জন দু'জনার জন্য। এটি হতে পারে অফিস থেকে ফিরে অথবা রাতের খাবারের পর। নিজেদের কথা বলুন। সারাদিনের কাজের একটা ছোট গল্প তৈরি করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করুন। এতে করে দু'জনের সারাদিনের কাজ সম্পর্কেও জানা যাবে এবং সময়ও কাটানো হবে।
ধৈর্যশীল হওয়া :অনেক সময় দেখা যায় সবকিছু একসঙ্গে চাই আমরা। সেটা না করে একটু ধৈর্যশীল হোন। এখন যেটা হলো না, সেটা অন্য কোনো সময় হবে এটি মনে রাখুন। সঙ্গীকে সময় দিন কাজটি করার। একসময় নিজেই বুঝবে কী করা উচিত আর কী উচিত নয়।
একসঙ্গে খাবার খান :অন্তত একবেলা একসঙ্গে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সকালে বের হওয়ার তাড়া থাকলে রাতে অফিস থেকে ফিরে তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সেরে একে অন্যকে সাহায্য করুন, যাতে রাতের খাবার একসঙ্গে টেবিলে খাওয়া যায়। কারণ খাবার টেবিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
কথোপকথনে পরিবর্তন :রোজ রোজ সংসারে একঘেয়ে আলাপচারিতা না করে আনন্দদায়ক কিছু কথা বলুন। হতে পারে নতুন কোনো সিনেমা, কোনো ফ্যাশন বা চলতি বিশ্বের হালচাল। নতুন কিছু নিয়ে কথা বলতে বলতে দেখবেন সম্পর্কও নতুন হয়ে উঠছে।
পারিবারিক সম্পর্ক :একে অন্যের পরিবারের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে একে অন্যের প্রতি আস্থার জায়গা তৈরি হবে। পরিবারের অন্য সদস্যকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য না করাই ভালো।
চমকে দেওয়া :মাঝে মধ্যে আপনার সঙ্গীকে সারপ্রাইজ দিয়ে চমক লাগিয়ে দিতে পারেন। হয়তো তার পছন্দের ফুল ঘরে ফেরার পথে আনলেন অথবা কোনো একদিন বলেছিল আমার অমুক খাবারটা প্রিয়, সেটি ডিনারে রেডি করলেন। আবার প্রিয় মানুষটির পছন্দের শাড়ি অথবা পাঞ্জাবিটা হঠাৎ পরেও বুঝিয়ে দিতে পারেন- তার প্রতিটি কথাই আপনি মনে রাখেন অর্থাৎ মনের মধ্যেই রাখেন।
অভিযোগ নয়, উৎসাহ :কোনো একটি কাজ করলে তাকে বাহবা দিন। প্রয়োজনে কিছুটা বাড়িয়েই বলুন। এতে দেখবেন ভালোর অঙ্কটা আরও বেড়েই যাবে, কমবে না।
পছন্দের উপহার :জিনিসটি হতে পারে অতি ক্ষুদ্র কিন্তু আপনার সঙ্গীর খুবই পছন্দের। মাঝে মধ্যে খেয়াল করে সেটি আনতে ভুলবেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবস অথবা বিশেষ দিনে প্রিয়জনকে সাধ্যের মধ্যে উপহার আসলে মুগ্ধ করে।