বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন আজ। তার চোখ দিয়েই বিশ্ব দেখেছে বাংলা চলচ্চিত্রের নানা রঙ ও রূপ।
বহমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটিকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সিনেমা প্রিয় মানুষ। বাংলা সিনেমা এগিয়েছে তার হাত ধরেই।
বাঙালির গভীর আবেগ, জীবনের নানা দিক সুনিপুণভাবে চলচ্চিত্রের ক্যানভাসে দক্ষ কারিগরের মতো ফুটিয়ে তোলেন তিনি। তার চোখ দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে দ্যাখে বিশ্ব।   
প্রথম সিনেমার জন্য তিনি বেছে নেন বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালি। এরপর নির্মাণ করেন অপুর সংসার ও অপরাজিত। 
প্রতিদ্বন্দ্বী, অরণ্যের দিনরাত্রি ও সীমাবদ্ধ চলচ্চিত্রে তিনি ফুটিয়ে তোলেন কলকাতা শহর। জনঅরণ্যসহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় উঠে আসে শিক্ষিত বেকার যুবসমাজের জীবনের টানাপোড়েন। 
ষাটের দশকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড় অবলম্বনে তার অনন্য সৃষ্টি চারুলতায় তিনি দেখিয়েছেন একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের গৃহবধূর জীবনের নানা সংকট।  
প্রতিটি ছবিতেই তিনি ভিন্ন স্বাদ দেয়ার চেষ্টা করে গেছেন দর্শকদের। তার লেখা কিশোর সাহিত্য ফেলুদা সিরিজকে চলচ্চিত্রে রূপ দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রফেসর শঙ্কুর কাহিনি আজও বেস্ট সেলার।  তার তৈরি সংগীতনির্ভর ছবি ‘গুগা বাবা’ ও ‘হীরক রাজার দেশে’ আজও বাংলা সিনেমায় হীরক খন্ডের মতোই উজ্জ্বল। 
কাজ পাগল এই মানুষটি শেষ ছবি ‘আগন্তুক’ বানিয়েছিলেন শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে। আগন্তুকে একজন প্রাজ্ঞ দার্শনিকের ভূমিকায় উৎপল দত্তের অসাধারণ অভিনয় দর্শকের মনে স্থায়ী জায়গা করে নেয়। 
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সত্যজিৎ সিনেমায় পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ ও শিল্প নির্দেশনাও দিয়েছেন। 
চার্লি চ্যাপলিনের পর তিনিই পৃথিবীর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অর্জন করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি। ১৯৮৫ সালে সত্যজিৎ রায় পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে।
১৯৯২ সালে মৃত্যুর আগে ভারত সরকার তাকে ভূষিত করে সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নে। সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অর্জন করেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড।