নরসিংদীতে ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর আবাসিক হোটেলে মায়ের আত্মহত্যা।
নরসিংদী শহরের একটি আবাসিক হোটেলের দরজা ভেঙে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার একদিন পর তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে ওই নারী নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের সন্তানকে হত্যা করে নরসিংদী শহরের একটি আবাসিক হোটেলে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ বলছে, সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করতেই ওই নারী আবাসিক হোটেলটিতে উঠেছিলেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে নরসিংদী শহরের বাজীরমোড় এলাকার হোটেল নিরালা নামের একটি আবাসিক হোটেলের নিচতলার ৬ নম্বর কক্ষ থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, গত রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ছেলে নাজমুস সাকিব ওরফে নাবিলের (২০) মৃত্যু হয়।
আবাসিক হোটেলটির রেজিস্টারে ওই নারী নিজের নাম রেহানা আক্তার (৩০) লিখলেও তার আসল নাম নাসরিন আক্তার (৪০)। নাসরিন আক্তার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা ছগির আহমেদের স্ত্রী। অন্যদিকে, তার ছেলে নাজমুস সাকিব ওরফে নাবিল ডেমরার গলাকাটা এলাকায় দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। পরিবারটির বসবাস নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লায়।
পুলিশ বলছে, গত রবিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লার বাসায় রাত আটটার দিকে কর্মস্থল থেকে ফেরেন ছগির আহমেদ। এ সময় তিনি ঘর বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় তার ছেলে নাবিল আর্তনাদ করছেন। তার বুক, পেট ও মাথায় ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন। এ সময় স্ত্রী নাছরিনকে বাসায় পাননি।
তিনি ছেলে নাবিলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাবিলের মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, নাসরিন আক্তার রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নরসিংদী শহরের বাজীরমোড় এলাকার হোটেল নিরালা নামের ওই আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে উঠেন। পরদিন দুপুরে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই নারী আমাদের জানিয়েছিলেন, গাজীপুর থেকে তিনি এখন এসেছেন, রাত হয়ে যাওয়ায় এই হোটেলে থাকতে চান। রেজিস্টারে নাম-ঠিকানা লেখার পর ওই নারীকে হোটেলটির নিচতলার ৬ নম্বর কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে তার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেন হোটেলটির কর্মচারীরা। পরে নরসিংদী মডেল থানায় ঘটনা জানানো হয়। পরে দুপুরে দিকে পুলিশ এসে ওই কক্ষের দরোজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, আবাসিক হোটেল থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হওয়ার পর তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে নাম-পরিচয় ও ঠিকানা নিশ্চিত হই আমরা। পরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারি। ওই নারী নিজের সন্তানকে হত্যা করে নরসিংদীর ওই আবাসিক হোটেলে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন।