অবরুদ্ধ গাজায় শিশুরা এখন জীবন-মৃত্যুর এক ভয়াবহ লড়াইয়ের মুখোমুখি। দুধের অভাবে শিশুরা কাঁদছে, আর চোখের সামনে সন্তানের কঙ্কালসার শরীর দেখে অঝোরে কাঁদছেন মায়েরা। এমন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে মায়েরা নবজাতককে দুধের বদলে চা খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন, যা শিশুদের ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া তিন মাসের মুনতাহার দাদি জানান, ঘরে দুধ বা কোনো খাবার না থাকায় তিনি নাতির প্রাণ বাঁচাতে ভেষজ উপাদানে তৈরি এক ধরনের চা খাওয়াচ্ছেন। তিনি বলেন, "ছয় মাসের আগে শিশুকে পানি পর্যন্ত দেওয়া যায় না। তবুও আমি তাকে অ্যানিস চা খাওয়াই। জানি, এতে ওর পেট ব্যথা হয়।"
শুধু মুনতাহারাই নয়, গাজার শত শত শিশুকে রুটির গুঁড়া, তিলের পেস্ট বা হারবাল চা খাওয়ানো হচ্ছে। খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে। এক মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "দশদিন ধরে কোনো দুধ পাইনি। আমার মেয়েকে বাঁচান। যদি এভাবেই চলতে থাকে আমি মেয়েকে হারিয়ে ফেলব।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মারিনা অ্যাড্রিয়ানোপলি গাজার পরিস্থিতিকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, "একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে চিকিৎসা সংকট—সব মিলিয়ে একটি জাতির ভবিষ্যৎ এখন মৃত্যুর প্রান্তে দাঁড়িয়ে।"
ডব্লিউএইচও'র তথ্যমতে, জুনে গাজায় অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। কিন্তু জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহেই পাঁচ বছরের কম বয়সী পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশুকে অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ডিবিসি/এমএআর