'ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন।' কথাটা খুব মেনে চলেন রুবেল। ৬০ বছর বয়সে এসেও এখনও বড় ভাই সোহেল রানার পায়ের পাশে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। বর্তমান দুনিয়ায় ভ্রাতৃভক্তির এমন নজির কমই হয়।
ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রুবেল। পুরো নাম মাসুম পারভেজ রুবেল। ফাইটিং ডিরেক্টর, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তার বেশ নামডাক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি মার্শাল কিংবদন্তি ও অ্যাকশন কিং হিরো হিসেবে সুপরিচিত। প্রায় আড়াই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে উত্থান পতন, উদ্ধার, বীরপুরুষ, বজ্রমুষ্টি, ও ভণ্ড।
বয়স ৬০ পেরিয়েছে। ছোটবেলা থেকে একটি বিষয় মেনে চলছেন তিনি। এত বছরেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তা হলো, বড় ভাই চিত্রনায়ক সোহেল রানার পাশে কখনোই বসেন না রুবেল; বরং সব সময় ভাইয়ের পায়ের কাছে বসতে দেখা যায় তাকে। ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল সোহেল রানার জন্মদিন। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই সেদিন তার বাসায় গিয়েছিলেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। সেখানেও দেখা যায়, সোহেল রানার পায়ের কাছে মেঝেতে বসে আছেন রুবেল।
বিষয়টি সোহেল রানাকেও অবাক করে। তিনি জানান, শত অনুরোধ করেও ছোট ভাইকে কখনও নিজের পাশে বসাতে পারেননি। এতদিন পরে এসে নিজের এই অভ্যাসের কারণ জানিয়েছেন চিত্রনায়ক রুবেল। তিনি বলেন, ‘বড় ভাইয়ের পায়ের কাছে বসতেই আমার ভালো লাগে। আমার কাছে সুইটেবল হচ্ছে তার পায়ের কাছটা। সারাজীবন এভাবেই চলে আসছে।’
একটি ঘটনাও শেয়ার করেন রুবেল, ‘পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের বিয়ে ছিল সেনাকুঞ্জে। শত শত লোক তো সেখানে। সেখানেও কিন্তু আমি ভাইয়ের পায়ের কাছে বসেছিলাম। কয়েকজন এসে অবাক হয়ে বলল, রুবেল ভাই, আপনি মেঝেতে বসেছেন! আমি বললাম, আপনারা জানেন, কার পায়ের কাছে বসেছি? আমার স্থান হচ্ছে ভাইয়ের পায়ের নিচে। এটা আমার ভালো লাগে। আমি বিশ্বাস করি, এটা আমার জন্য এমন একটা স্থান, যেখানে অন্য কারও স্থান নেই।’
রুবেলের চলচ্চিত্রে অভিনয়, তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া—সবকিছুর পেছনে ভাই সোহেল রানার অবদান অনেক। তারই প্রযোজনায় ‘লড়াকু’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে রুবেলের। এরপর দুই ভাই মিলে আরও অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ক্যারিয়ারের পুরো সময়টায় বড় ভাইয়ের পূর্ণ সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন রুবেল।
সোহেল রানা সম্পর্কে রুবেল আরও বলেন, ‘কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর ব্যাখা দেওয়া যায় না। ভাইয়া আমার কাছে তেমনই এক বিষয়। এখনও কেউ তার সম্পর্কে কটু কথা বললে আমি ছেড়ে দিই না। আসলে সারা জীবন তপস্যা করলেও এমন ভাই পাওয়া যায় না। আমি সৌভাগ্যবান।’