আমরা যখন কোনো বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি অথবা কোনো বিষয়ে চাপ অনুভব করি অনেকের বুক ধড়ফড় করে। পরীক্ষার সময় লিখতে বসলে অথবা কোনো দলিলে স্বাক্ষর করতে গেলে অনেকের হাত কাঁপে। এসব বিশেষ মুহূর্ত ছাড়াও হাত কাঁপা, পা কাঁপা অনেকের রোজকার ঘটনা হয়ে যায় এবং তা হয় অতিমাত্রায়। এমতাবস্থায় করণীয় কী?
হাত কাঁপলেই যে মারাত্মক রোগ হয়েছে, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। থাকতে পারে অনেক সাধারণ কারণও। যেমন: ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত ধূমপান, ভিটামিন বি টুয়েলভ।
হাত কাঁপার পাশাপাশি বুক ধড়ফড় করা, পেট খারাপ থাকা এবং ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে থাইরয়েড গ্রন্থির অতি সক্রিয়তা বা হাইপারথাইরয়েডিজম হয়ে থাকতে পারে। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন পাওয়া গেলে আলট্রাসনোগ্রাম বা স্ক্যানও করা লাগতে পারে।
বয়স্ক রোগীদের হাত কাঁপার অন্যতম কারণ এসেনশিয়াল ট্রেমর (স্নায়বিক সমস্যা)। এটি বংশগত হতে পারে। এ জন্য কোনো পরীক্ষা প্রয়োজন হয় না। প্রপ্রানোলল, বোটক্স ইনজেকশন ইত্যাদি দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়।
কিছু ওষুধও হাত কাঁপার জন্য দায়ী হতে পারে। সালবিউটামল, মৃগীরোগ বা দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ, কিছু ক্যানসারের ওষুধেও হাত কাঁপে।
স্কয়ার হাসপাতালের সহযোগী কনসালট্যান্ট (মেডিসিন বিভাগ) ডা. রোজানা রউফ বলেন, পারকিনসনস ডিজিজ হাত কাঁপার একটি অন্যতম কারণ। স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়া, হাত কাঁপা, হাঁটার সময় ভারসাম্য ঠিক না থাকা, হস্তাক্ষরে পরিবর্তন, অস্পষ্ট কথা—এসব পারকিনসনস ডিজিজের লক্ষণ। এর নির্দিষ্ট ওষুধ আছে। এ ছাড়া অন্যান্য স্নায়ুরোগ, যেমন মাল্টিপল স্কেরোসিস হলেও হাত কাঁপতে পারে। এমআরআই ব্রেন বা সিএসএফ পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে ৪ মিলিমোলের নিচে গেলেও হাত কাঁপতে পারে।
তাই হাতের কাঁপুনি হলে তার সঠিক কারণ নির্ণয় করে তবেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এমনটা হলে তাই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
হাত কাঁপার সমস্যা থেকে নিজেকে বের করে আনতে নিয়মিত তিনটি বিশেষ ব্যায়াম অনুশীলনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো- রাবার বল ব্যায়াম, হাতের ডাম্বেল ব্যায়াম ও আঙুলের ট্যাপ ব্যায়াম।
রাবার বল ব্যায়ামে একটি রাবার বল যতটা সম্ভব শক্তভাবে চেপে ধরতে চেষ্টা করুন। হাতের কাঁপুনি নিয়ন্ত্রণে এই ব্যায়াম খুবই কার্যকর। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বল চাপলে স্নায়ু সংকুচিত হয়। আর তাতেই হাত কাঁপা রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে রোগী।
হাত কাঁপা রোগ থেকে মুক্তি পেতে হাতের ডাম্পেল ব্যায়ামও করতে পারেন। স্নায়ুর ক্লান্তি ও চাপ দূর করার পাশাপাশি হাতের কম্পন দূর করতেও এই ব্যায়ামটি সমান কার্যকর।
আঙুলের ট্যাপ ব্যায়াম করতে আপনার আঙুল এবং হাতের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মিত এই ব্যায়ামের অভ্যাসে হাত সক্রিয় থাকে। এর গতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই হাত কাঁপার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আঙুলের ট্যাপ ব্যায়ামও নিয়মিত অনুশীলন করতে পারেন।