ইন্দোনেশিয়া সরকার খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার অজুহাতে দেশটির পাপুয়া প্রদেশে বিশাল আকারের একটি কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই অঞ্চলের বনভূমি দ্রুতগতিতে পরিষ্কার করতে এবার সরাসরি সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।
রাষ্ট্র-সমর্থিত এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে ধান ও আখ চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মোট আয়তনের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়।
সাবেক একজন জেনারেলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রকল্পে সহায়তা করতে পাপুয়ায় পাঁচটি ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, সেনারা কেবল নিরাপত্তাই দিচ্ছে না, তারা এক্সকাভেটর চালিয়ে বন ধ্বংস এবং স্থানীয়দের উচ্ছেদেও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
এমনকি সেনারা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে টিকটকে ভিডিও-ও প্রকাশ করেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে ৪০ হাজার হেক্টরের বেশি জমি পরিষ্কার করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ভয়াবহ বন্যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার জন্য বন ধ্বংসকেই দায়ী করা হচ্ছে। এই বিপর্যয়ের মধ্যেই পাপুয়ায় নতুন করে বন উজাড়ের এই মহাযজ্ঞ চলছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, পাম অয়েল ও এই কৃষি প্রকল্পের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।
পরিবেশবাদী ও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এই প্রকল্পের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ মারাত্মকভাবে বাড়বে। একটি সরকারি সমীক্ষাতেই ৩১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্বন নিঃসরণের আশঙ্কা করা হয়েছে, যদিও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে এর পরিমাণ হবে দ্বিগুণ। এতে পাপুয়ায় থাকা বিরল প্রজাতির পাখি ও বৃক্ষ ক্যাঙ্গারুর মতো প্রাণীদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সরকার ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমির 'সংরক্ষিত বন'-এর মর্যাদা বাতিল করেছে।
সূত্র: ফিনান্সিয়াল টাইমস
ডিবিসি/এনএসএফ