সরকার পরিচালনায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ (ভিএফজিবি)। এই দাবীর সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
প্রবাসী পেশাজীবীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার (১৯শে জুন) সমাপনী সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম ও গণধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ। দেড় কোটি প্রবাসীকে এনআইডি প্রদান তথা ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দেশের মূল ধারায় দেশের সঙ্গে তাদের বৈষম্যের অবসান ঘটবে পাশাপাশি তাদেরই একাত্মতা রেমিটেন্স এর প্রবাহ বাড়াতে পারে কয়েকগুণ।
প্রবাসী পেশাজীবীদের লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই সংগঠনের তিন দিনব্যাপী রেসিডেন্সিয়াল অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে।
আলোচকবৃন্দ উল্লেখ করেন, গত পঞ্চাশ ৫৪ বছরে মেধার যে বহিঃপ্রবাহ হয়েছে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো না। তাই এনআইডি প্রদান কিংবা ভোটাধিকার একটা সুযোগ তৈরি করবে। দেশের মানুষের সঙ্গে প্রবাসীদের যে বিপুল বৈষম্য তৈরি হয়েছে তার অবসানে ভূমিকা রাখবে। প্রবাসীরা দেশের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, নাগরিক সেবা না নেয়ার ফলে তাদের প্রতি দেশ ও সরকারের দায়িত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সেই ক্ষেত্রে তাদের পরিচয় পত্র কিংবা ভোটাধিকারের মতো অধিকার থেকে তাদের বঞ্চনার অবসান জরুরী। ড. ইউনূসের প্রথম ১০০ দিনের ভাষণে আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা, এখন নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
সম্প্রতি নাগরিক সেবা বাংলাদেশ বলে যে ডিজিটাল সার্ভিস চালু করা হয়েছে সেটা দেশের পাশাপাশি প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোতে স্থাপন করা হলে সহজেই সকল প্রবাসী তাদের পরিচয় পত্র তথা ভোটাধিকার পাবেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় প্রতিটি প্রবাসী অধ্যুষিত শহরে আইটি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন মানি ট্রান্সফার ট্রাভেল এজেন্সী, চেইন শপ, ফার্মেসি, এমনকি রেস্টুরেন্টের মধ্যে একাংশে এ ধরনের সার্ভিস স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। যার ফলে দূতাবাসের উপর চাপ কমবে এবং দেশের মানুষের মতই প্রবাসীরা পৃথিবীর যেকোনো অংশ থেকে সমান এবং বৈষম্যহীন সুবিধা পেতে পারেন।
প্রবাসী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ আইটি উপদেষ্টা ফায়েজ তাইয়েব'এর কার্যক্রম ও সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, তিনি দেশের বাইরে নাগরিক সেবা কেন্দ্র সমূহ ছড়িয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
প্রবাসী পেশাজীবীদের এই সংগঠনের প্রধান ও উদ্যোক্তা ডঃ হাসনাত এম হোসাইন এমবিই প্রবাসী প্রতিনিধিদের সংসদে বিশেষ করে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। রাজনৈতিক দলগুলো যে সংস্কার কাজ করছেন, তাতে প্রবাসীদের জন্য নীতি নির্ধারণী অবস্থান, প্রশাসনে প্রতিনিধিত্ব এবং দেশের পলিসি লেভেলে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন।
প্রবাসীদের কাছ থেকে সরকার শুধু রেমিটেন্স আহবান করে, কিন্তু রেমিটেন্সের বাইরে ও প্রবাসীদের মেধা ও অভিজ্ঞতা যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। গত পাঁচ দশকে মেধা পাচারের কারণে বিভিন্ন টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে বিদেশে অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রবাসীদের আরো বেশি সংখ্যায় নিয়োগ প্রয়োজন বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরা হয় দেশের মানুষের সঙ্গে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসানের বিষয়ে আলোচনা হয়। একটা ব্যাপক পরিবর্তনের পর আগামীর বাংলাদেশে প্রবাসীরা তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। এছাড়া দেশে প্রবাসীদের বিভিন্ন পলিসি ফোরামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন এবং প্রবাসী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাতে একমত পোষণ করেন। সংগঠনের পরবর্তী রেসিডেন্সিয়াল ডিসেম্বর ২০২৫ এ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর ও সেক্রেটারি রাশেদ খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও মুখ্য সমন্ময়ক সার্জিস আলম,জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যচিব ডাঃ তাহমিন জারা, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, গ্রীস দুবাই ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিএফজিবি'র পেশাজীবী প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
ভিএফজিবি'র সভাপতি ডঃ হাসানাত হোসাইন এমবিই সভাপতিত্ব করেন ও সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সারাফত হোসেন বাবু অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
ডিবিসি/ এএমটি