সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব বিদ্যাদেবী সরস্বতী পূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও শাস্ত্র মতে, এই দিনটিতে দেবী সরস্বতী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দিনটিকে বলা হয় ‘বসনমশ পঞ্চমী’। সরস্বতী জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী।
এবার মাঘ মাসে না হয়ে ১ ফাল্গুন আজ বুধবার ( ১৪ ফেব্রুয়ারি) সরস্বতী পূজা হচ্ছে। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও এ পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির-পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়িতে সাড়ম্বরে সরস্বতী পূজা হবে। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি দেবেন। এদিন শিশুদের হাতেখড়িরও আয়োজন করা হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না। আমরা সবাই মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, তাই এ দেশ আমাদের সবার। আশা করি, আগামী দিনে সব ধর্মের পারস্পরিক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় হবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সব ধর্মের উৎসব আনন্দমুখর পরিবেশে একসঙ্গে উদযাপন করি। জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে অটুট রেখে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করি।
সনাতন ধর্মানুযায়ী, সরস্বতী পূজার দিন সকালে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরতে হয়। তবে পূজার আগে শরীর ও মনের শুদ্ধির জন্য এদিন নিম ও হলুদ বাটা মাখার রীতি প্রচলিত রয়েছে। পূজার স্থানে একটি পিঁড়ির ওপর সাদা কাপড় পেতে সরস্বতীর মূর্তি স্থাপন করে থাকেন ভক্তরা। মূর্তির সামনে ভরা পাপত্র বসিয়ে তার ওপরে রাখতে হয় আম্রপত্র। এর পর তার ওপর পান পাতা রেখে দিতে হয়। পূজার স্থানে একপাশে হলুদ, কুমকুম, চাল, সাদা ও বাসন্তী রঙের ফুল-মালা দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়।
এ ছাড়াও থাকে কুলসহ নানা প্রকারের ফল। কারণ, কুলই সরস্বতী পূজার প্রধান ফল। সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়ার রীতি প্রচলিত নেই। বরং পূজার অঞ্জলির পরই সাধারণত কুল খাওয়া হয়ে থাকে এবং সরস্বতী মূর্তির এক পাশে রাখা হয় দোয়াত, খাগের কলম ও বই। আমের মুকুল, পলাশ ফুল অর্পণ করবেন। সংগীত বা নৃত্যশিল্পী হলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সামগ্রীও মূর্তির পাশে রাখা হয়ে থাকে। এরপর সরস্বতী পূজার মন্ত্রপাঠ পূর্ণ করে দেবীকে ভোগ নিবেদন করে থাকেন সনাতনী সমাজ।
ডিবিসি/আরপিকে