জাতীয়

সর্বকনিষ্ঠ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ সিপাহী হামিদুর রহমান

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১লা ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:৪৮:০৭ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ৯ মাস যুদ্ধ করে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো বীরযোদ্ধারা। তাদের মধ্যে আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাতজনকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি।

সাতচল্লিশে দেশভাগের পর ভারতের ভিটেমাটি ছেড়ে নতুন দেশ পাকিস্তানে পাড়ি জমান আক্কাস আলী মণ্ডল-কায়েদাতুন্নেসা দম্পতি। ঝিনাইদহের মহেশপুরের খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে তাদের সংসারে ১৯৫৩'র ২ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন হামিদুর রহমান। কিন্তু পাকিস্তানি শাসন-শোষণে দারিদ্র্যের যাতাকলে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তাদের।

পরিবারের জন্য জীবনযুদ্ধ শুরু করতে একাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন হামিদুর। তখন স্বাধিকার আন্দোলনে উন্মাতাল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়ে যায় গণহত্যা। সেই রাতেই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু ইউনিট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। হামিদুর ছুটে যান মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। পরদিনই ফিরে পরিবারের জন্য জীবনযুদ্ধ ছাপিয়ে জেড ফোর্সের অধীনে শুরু করেন দেশের জন্য লড়াই।

অক্টোবর মাস, মৌলভীবাজারের ধলইয়ে টিলা ও চা বাগানবেষ্টিত পাকিস্তানি সীমান্ত ঘাঁটি দখলের পরিকল্পনা করে মুক্তিবাহিনী। ২৭ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে পাহাড়ি পথে অগ্রসর হচ্ছিলেন হামিদুরসহ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্য যোদ্ধারা। ২৮ অক্টোবর, পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে বাধে তুমুল সংঘর্ষ। শত্রুপক্ষের মেশিনগান আর মর্টার হামলার মুখে দেখা দেয় মুক্তিবাহিনীর পরাজয়ের শঙ্কা। তখনই দুঃসাহসিক স্পর্ধায় পাক বাহিনীর মেশিনগান পোস্ট ধ্বংস করতে গ্রেনেড হাতে তুলে নেন হামিদুর।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সহযোদ্ধা আনসার ক্যাপ্টেন (অব.) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, 'ড্রেন দিয়ে হামিদুর রহমান প্রায় ৫০ থেকে ৬০ গজ বুকে হেঁটে, ক্রলিং করে দুইটি লাইট মেশিন গানের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ে ওবং দুইটি লাইট বাংকারের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর সাথে সাথে লাইট মেশিনগানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পেছন থেকে শত্রুপক্ষ দৌড়ে এসে হামিদুর রহমানকে গুলি করে।'

বীরোচিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষার পাশাপাশি বিজয়ের পথ সুগম করেন সিপাহী হামিদুর।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, '১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে আমার চাচা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা ঝিনাইদহ জেলাবাসী ও মহেশপুর উপজেলাবাসী গর্বিত। দেশের মানুষও গর্বিত।'

হামিদুরের শারীরিক মৃত্যু হলেও অমর হয়ে রইলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ হয়ে। আঠারো বছরের জীবনে বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লিখে গেলেন নিজের নাম।

আরও পড়ুন