জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, "ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।" দলের শোকজ নোটিশের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার পতনের বর্ষপূর্তির দিনে দলের শীর্ষ নেতাদের কক্সবাজার সফর নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ৫ই আগস্ট এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার কক্সবাজার সফরকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ায় যে, তারা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে একটি হোটেলে গোপন বৈঠকে বসেছেন। এই খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে শীঘ্রই জানা যায় যে, পিটার হাস সেই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। এই গুজবের অবসান ঘটলেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এনসিপির পক্ষ থেকে কক্সবাজার সফরকারী নেতাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়।
এরই জবাবে বৃহস্পতিবার (৭ই আগস্ট) নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি লেখেন, "৫ই আগস্ট আমার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না এবং দল থেকেও কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।"
পাটওয়ারী জানান, ৪ঠা আগস্ট রাতে তিনি দলের আহ্বায়ককে তার ব্যক্তিগত সফরের কথা জানিয়েছিলেন। দলের সদস্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিশ্চিত হন যে, রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে তার কোনো দায়িত্ব নেই। এরপরই ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য তিনি কক্সবাজার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম এবং তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি ছিলেন।
তার সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম, তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। তিনি এই কাজকে অপরাধ নয়, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য
দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা বলে অভিহিত করেন।
পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের গুজবটিকে তিনি "সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র" বলে আখ্যা দেন। তিনি জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে যে সেখানে পিটার হাস নামে কেউ ছিলেন না।
অতীতেও তিনি একাধিকবার ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছেন এবং এ নিয়ে দল থেকে কখনো আপত্তি জানানো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শোকজ নোটিশটি “বাস্তবভিত্তিক নয়”।
সবশেষে, দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি তার লিখিত জবাব প্রদান করেন এবং দৃঢ়ভাবে বলেন, "ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।"
ডিবিসি/এএমটি