শনিবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারণার সময় হত্যাচেষ্টা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। ১৯১২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টও একইভাবে বন্দুকধারীর আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেও তার সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের মতোই রুজভেল্ট তখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ছিলেন।
প্রায় দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর রুজভেল্ট স্বেচ্ছায় প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে গিয়ে ১৯০৮ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হননি। তবে পরে উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফটের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে রুজভেল্ট ১৯১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টাফটের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচনি প্রচারের অংশ হিসেবে ১৯১২ সালের ১৪ই অক্টোবর রুজভেল্ট মিলওয়াকিতে যান। সেখানে জন শ্রাঙ্ক নামের এক ব্যক্তি তার ওপর গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীকে ধরে ফেলে, কিন্তু রুজভেল্ট উত্তেজিত জনতাকে থামিয়ে দেন এবং হামলাকারীর জীবন রক্ষা করেন।
রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে টাফটের কাছে মনোনয়ন হারানোর পর রুজভেল্ট প্রগ্রেসিভ পার্টি নামে আলাদা দল গঠন করেন এবং নির্বাচনে টাফট ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী উড্রো উইলসনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রুজভেল্টের বয়স তখন ছিল ৫৩ বছর। তার বুকপকেটে চশমার ধাতব খাপ ও ভাঁজ করা ৫০ পৃষ্ঠার বক্তৃতার কপি থাকার কারণে গুলিটি তার বুকে সরাসরি আঘাত করতে পারেনি। রুজভেল্ট বুকে হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখে বুঝতে পারেন তিনি আহত হয়েছেন।
সহযোগীরা হাসপাতালে নিতে চাইলে রুজভেল্ট রাজি হননি এবং বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ৯০ মিনিটের বক্তৃতা দেওয়ার পর হাসপাতালে যান। গুলিটি তার হৃদপিণ্ডের কাছে থেমে গিয়েছিল।
হামলাকারী জন শ্রাঙ্ক একাই এই হামলা চালিয়েছিল এবং তিনি কোনো নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ছিলেন না। শ্রাঙ্ক বলেছিলেন, তিনি রুজভেল্টকে জর্জ ওয়াশিংটনের দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট থাকার নিয়ম লঙ্ঘন করা থেকে থামাতে চেয়েছিলেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও রুজভেল্ট সেদিন বক্তৃতা দিয়ে অনেক মনোযোগ কাড়লেও নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। তিনি টাফটের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু রিপাবলিকান ভোট বিভক্ত হওয়ায় উড্রো উইলসনের কাছে পরাজিত হন।
রুজভেল্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্ট হত্যার শিকার হন। তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলেও আছেন। রুজভেল্ট তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ম্যাককিনলে নিহত হওয়ার পর রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট হন। রুজভেল্টও পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন।
ডিবিসি/আরপিকে