রাজধানীর বেইলী রোডের ৭১ নম্বর ঠিকানায় অবস্থিত ঢাকা জেলা সার্কিট হাউজ, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কাজে রাজধানীতে এলে অবস্থান করেন। এই পুরোনো ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত সরকার।
দেখে মনে হবে পাঁচ তারকা হোটেল, কেবল সাজসজ্জাতেই খরচ ১৭ কোটি টাকা। আর সুইমিংপুলে ৬ কোটি টাকা। সরকারি কর্মকর্তাদের থাকার জন্য ঢাকা জেলা সার্কিট হাউজে দুটি ভবন নির্মাণে সবমিলিয়ে খরচ ৩৩৪ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ আমলে অনুমোদিত বিলাসী অনেক প্রকল্প অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করলেও সার্কিট হাউজের ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যতিক্রম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে, ভবনটি বেশ পুরোনো হওয়ায় তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বিগত সরকার। ২০২৪ সালের ৯ই জুন, একনেক সভায় ৩৩৪ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নতুন করে অত্যাধুনিক সার্কিট হাউজ ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। তবে প্রকল্পটি বেশ বিলাসী হওয়ায় সে সময় নানান আলোচনার জন্ম দেয়।
৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় বহু প্রকল্প বাতিল করে দেয়। তবে অজানা কারণে সার্কিট হাউজ ভবন নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিল করা হয়নি।
প্রকল্পটির বেশকিছু নথি এসেছে ডিবিসি নিউজের হাতে। এতে দেখা যায়, পাঁচ তারকা হোটেলের মতো সাজানো হচ্ছে পুরো ভবন। সুইমিংপুল নির্মাণেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকার বেশি। গার্ডরুম তৈরিতে খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা।
সার্কিট হাউসের সাজসজ্জায় অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম আনা হবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান থেকে। শুধু এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। বেজমেন্টসহ দুটি ভবনের একটি হবে ১৩ তলা ও অন্যটি ৮ তলা। আর শুধু ভবন দুটি নির্মাণেই খরচ ধরা হয়েছে দুইশো ৩৯ কোটি টাকার বেশি।
পাশ হওয়ার প্রায় এক বছর পর চলতি বছরের ৪ঠা মে বিলাসী প্রকল্পটির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। জানা গেছে ১২ই জুন টেন্ডার উন্মুক্ত করার পর এ কাজটির জন্য মনোনীত হয় ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। তবে এখনও পর্যন্ত দেয়া হয়নি কার্যাদেশ।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এ বিলাসী প্রকল্প? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা ডিভিশন এ গেলে ক্যামেরা বাইরে রেখে রুমের ভেতরে প্রবেশ করতে বলেন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব। পরে তথ্যের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তারের কাছে গেলেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও মেলেনি সাক্ষাৎ। দফায় দফায় চেষ্টা করা হলেও ধরেননি ফোন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিতে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তাই এ মুহূর্তে এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতি পুনর্গঠনের এমন সময়ে জনগণের টাকায় বিলাসবহুল কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়নের প্রয়োজন আছে কি না, তা সরকারকে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ডিবিসি/ এইচএপি