চোখ মেললেই যতদূর দৃষ্টি যায়, শুধু ধু-ধু বালুকণা আর প্রচণ্ড রোদের উত্তাপ। পৃথিবীর বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি ‘সাহারা’র কথা ভাবলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক এক প্রান্তর। কিন্তু আপনি জানেন কি? আজকের এই রুক্ষ সাহারা একসময় ছিল সবুজে ঘেরা ঘন জঙ্গল, যেখানে চরে বেড়াত হাতি, জিরাফ আর জলহস্তীর মতো বন্যপ্রাণীরা! বিজ্ঞানের ভাষায় সাহারার সেই সোনালী সময়কে বলা হয় ‘আফ্রিকান হিউমিড পিরিয়ড’ বা ‘সবুজ সাহারা’।
বিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ১১,০০০ থেকে ৫,০০০ বছর আগে সাহারার রূপ ছিল আজকের ঠিক বিপরীত। সাহারার বুকে তখন ছিল বিশাল সব নদী, হ্রদ এবং জলাশয়।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা সাহারার বিভিন্ন গুহায় প্রাচীন মানুষের আঁকা এমন সব গুহাচিত্র খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে মানুষকে নদীতে সাঁতার কাটতে, মাছ ধরতে এবং গবাদি পশু পালন করতে দেখা গেছে। সাহারার ‘তিলি এলাকা’য় পাওয়া ফসিল প্রমাণ করে যে, সেখানে একসময় কুমির এবং জলহস্তীর মতো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল।
সবুজ সাহারা কেন এবং কীভাবে মরুভূমিতে পরিণত হলো, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘ গবেষণা চলেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পৃথিবীর অক্ষীয় ঘূর্ণন বা টিল্ট (Axial Tilt)-এর পরিবর্তনকে।
আজ থেকে প্রায় ৮,০০০ বছর আগে পৃথিবীর কক্ষপথের সামান্য পরিবর্তনের ফলে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের তাপ পড়ার ধরনে পরিবর্তন আসে। এর ফলে মৌসুমি বায়ুর (Monsoon) গতিপথ বদলে যায়। সাহারা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত নাটকীয়ভাবে কমে যায় এবং ধীরে ধীরে গাছপালা মরে গিয়ে এটি আজকের শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়।
এমআইটি (MIT)-এর গবেষকদের মতে, সাহারা মরুভূমির এই পরিবর্তন চক্রাকার। পৃথিবীর এই বিশেষ ঘূর্ণন প্রতি ২০,০০০ বছর পরপর ঘটে। অর্থাৎ, বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন সুদূর ভবিষ্যতে সাহারা আবারও সবুজে ভরে উঠতে পারে।
প্রকৃতির এই রূপবদল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনশীল এবং কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সাহারার তপ্ত বালির নিচে চাপা পড়ে আছে এক সমৃদ্ধ সবুজ ইতিহাস, যা আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমাদের সামনে উন্মোচিত।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন
ডিবিসি/এনএসএফ