বিনোদন, অন্যান্য

সিলেটের 'সাদা পাথর' এলাকা যেন এক ‌‌'মিনি কক্সবাজার'

Faruque

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ১০ই জানুয়ারী ২০২২ ০৬:৫২:৩৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

সিলেটের সীমান্তবর্তী পর্যটনকেন্দ্র 'সাদা পাথর' যেন হয়ে উঠেছে মিনি এক কক্সবাজার। উচ্ছল আনন্দ, জলকেলি আর আয়েশি সময় কাটানোর সবই রয়েছে সেখানে। তবে, ধলাইয়ের পানি কমে যাওয়ায় বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে মাঝিদের, তাতেই যেন আনন্দে ভাটা পড়েছে পর্যটকদের। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সরকার নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, বলছে স্থানীয় প্রশাসন।

ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের স্রোত। আর ধলাই নদীর বুকে ছড়ানো বর্ণিল পাথরের বিছানা। এ যেন প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য। অপরুপ এই জায়গাটি 'সাদাপাথর'। এই প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে ছুটে আসেন লাখো পর্যটক। পর্যটকদের চোখে কখনো 'সাদাপাথর' হয়ে ওঠে "মিনি কক্সবাজার"।    



শুকনো মৌসুমে ধলাই নদীর পানি কমার সাথে সাথে  ভাটা পড়ে পর্যটকদের আনন্দেও। এসব স্থানে যাতায়াতে বেগ পোহাতে হয় মাঝিদের। ((নৌকা ঠেলে নিয়ে যাওয়ার ফুটেজ)))

সাদাপাথর এলাকাকে আরও পর্যটকবান্ধব করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ; এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সিলেটের পর্যটন উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে; কার্যকর হলে এ অঞ্চলের পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে. মনে করেন সবাই।

চারপাশে ছড়িয়ে আছে সাদা পাথর। মনে হয় যেন, প্রকৃতি শুভ্র বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি। চারদিকে ঘিরে আছে ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়। তার উপরে যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এ ছাড়াও চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃতি। সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই অপূর্ব স্থানটি উপভোগের জন্য ছুটে আসে সাদা পাথরের দেশে।

সাদা পাথর আবার কোথায়? নিশ্চয়ই এমনটিই ভাবছেন! সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ অবস্থিত। আর সেখানেই আছে সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে ‘সাদা পাথর’ নামক স্থানটি।

সিলেট নগরীর সীমানা পার হলেই পৌঁছে যাবেন লাক্কাতুরা চা বাগান। সেখানে সারি সারি চা গাছ দেখে চোখ জুড়াবে। বাংলাদেশের প্রথম চা বাগান এটি। এই চা বাগানের সীমানা পেরিয়ে সালুটিকর বাজার। তারপর কোম্পানীগঞ্জের সীমানা শুরু।

এরপরই দেখবেন, একদিকে সবুজ ধানক্ষেত আর অন্যদিকে বিশাল জলাভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে যাবেন কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজার। সেখান থেকে ট্রলারে আধা ঘণ্টায় ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সাদা পাথর পর্যটন স্পটে পৌঁছে যাবেন।

ভোলাগঞ্জ কোয়ারির জিরো পয়েন্টের ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা বনাঞ্চল। সেদিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। আর নিচে তাকালেই দেখবেন সাদা পাথর ছড়িয়ে আছে। আর মাঝে স্বচ্ছ পানি। সেখান থেকে নেমে আসছে ঝরনার অশান্ত শীতল পানি। ঝরনার পানি গড়িয়ে চলে যাচ্ছে ধলাই নদীর বুকে।

ভোলাগঞ্জ যাওয়ার সঠিক সময় কখন?

সারাবছরই সাদা পাথরের দেশে ঘুরতে যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় এ স্থানের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মতো পানি থাকে না। তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।

আর বর্ষায় নদীর বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা ভরাট নদীর শোভা বাড়িয়ে দেয় হাজারগুণ। সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোতে নয়ন জুড়ায়। অনেকেই সাদা পাথর পর্যটন স্পটকে ছবিতে বিছনাকান্দি ভেবে ভুল করেন!

দেখতে একই মনে হলেও সামনাসামনি গেলে পার্থক্যটা চোখে পড়বে। সেখানকার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য বোধ হয় পাথরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে চলা পানি। কলকল শব্দে অশান্ত হয়ে নদীর বুকে মিশে যায় ঝরনার পানি।

ভারত থেকে নেমে আসা সীমান্ত নদী ধলাই নদীর জিরো পয়েন্ট এলাকা স্থানীয়ভাবে ‘সাদা পাথর’ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই স্পটটি এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাটি দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।

জানা যায়, ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর পানির সঙ্গে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। পাথর উত্তলোনের কাজ সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে রোপওয়ে টাওয়ারগুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সেখানে গেলেই চোখে পড়বে পাথর উত্তেলনের দৃশ্য। ছোট ছোট নৌকায় করে পাথর উত্তলোন করে বয়ে নেওয়ার দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এভাবেই সেখানকার মানুষেরা জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে পাথর উত্তোলন করে থাকেন। দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের উৎসমুখ সাদাপাথরে সবসময়ই চেরাপুঞ্জি থেকে স্বচ্ছ নীল ও ঠান্ডা পানি নেমে আসে।

কীভাবে যাবেন সাদা পাথর দেখতে?

সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলে সিলেট কোম্পানীগঞ্জ রুটে। ১২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারে নামাবে। টুকের বাজার থেকেই ট্রলারে চলে যেতে পারেন সাদা পাথর।

কোম্পানীগঞ্জ পৌঁছে টুকের বাজার ঘাট থেকে ট্রলারে সাদা পাথর পৌঁছাতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। যাওয়া-আসায় নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। এখানে নৌকা রিজার্ভ করে নিতে হয়, অন্যথায় ভুগতে হবে।



তাই দলবেঁধে গেলে খরচটা একটু কম হবে। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ সরাসরিও চলে যাওয়া যায়। ১০ মাইল নামক স্থান থেকে নৌকা নিলে ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়া পড়বে, তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে অটোরিকশায়।

আরও পড়ুন