ভালোবাসার কাছে কোনো কিছুই যে বাধা মানে না, তার একটি প্রমাণ সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের শোলমারী গ্রাম। এই গ্রামের অনেকের মনের মানুষই থাকে ভারতে।
পাশাপাশি দুটি গ্রাম, কিন্তু দেশ ভিন্ন। তাই সীমান্তে সবসময় সক্রিয় থাকে প্রহরা। অপরাধ ঠেকাতে আছে কাটাতারের বেড়া।
কিন্তু ভালোবাসার কাছে কোনো কিছুই যে বাধা মানে না। পূজা-পার্বণ আর নানা উৎসবে খুলে দেওয়া হয় সীমান্ত। তখনই দেখা হয় প্রতিবেশী গ্রামের মানুষের সাথে।
অল্প সময়ের সেই দেখাসাক্ষাতেই অনেকে প্রেমে পড়ে যান একে অপরের। কারও কারও সম্পর্ক গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। সুযোগ পেলেই সীমান্ত পেরিয়ে ছুঁটে যান প্রিয় মানুষটির কাছে।
সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের শোলমারী গ্রামের এমন অনেক সম্পর্কের নজির রয়েছে যার কিছু পরিণতি পেয়েছে, আর কিছু আবার গুণছে অপেক্ষার প্রহর।
এমনই একজন ওই গ্রামের শাহারুখ আহমেদ। ২০১৬ সালে কাঁটাতারের বেড়ার আড়ালেই নদীয়ার এক মেয়েকে মন দিয়ে বসেন তিনি। পরের বছর বিজিবি-বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওপার বাংলায় গেলেও বিয়ে করা সম্ভব হয়নি আইনি জটিলতায়। ফিরে এসেছেন যদিও- হাল ছাড়েন নি এখনও।
শাহারুখ আবেগি হয়ে বলেন, 'মন তো চায়নি ওকে রেখে এখানে চলে আসি। তাকে সব সময় মিস করি আমি। তার এক জোড়া পায়েল আছে আমার কাছে, যেট আমি প্রতিদিন একবার হইলেও দেখি।‘
এমন অনেক প্রেমের নজির রয়েছে গ্রামটিতে। সময়ের ব্যবধানে হয়তো কমেছে যোগাযোগ, কিন্তু মন থেকে মুছে যায়নি প্রিয়জনের মুখ।
আবার কাটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে দুই বাংলার অনেকেই সংসার পেতেছেন। এখানে ধর্ম কিংবা সীমান্ত বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সীমান্তবর্তী গ্রামটিতে বিয়ে করে দুই দেশের মধ্যে ভালবাসার সেতু গড়েছেন শতাধিক যুগল।
লেখক ও কবি সুখি ইসলাম বলেন, 'তারকাঁটা কখনো ভালবাসাকে আটকে রাখতে পারে না। এই আবেগটা আসে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে। ভালবাসার যে অনুভূতিটা আসে সেটা শুধু মাত্র প্রেমিক-প্রেমিকাই বলতে পারে।'
যুগে যুগে কালে কালে ভালবাসার পথে বাধা এসেছে নানাভাবেই। তাতে প্রেম আরও গাঢ় হয়েছে।
কাঁটাতারে দুই দেশের ভৌগলিক সীমা আলাদা করা গেলেও তা বাধ সাধতে পারেনি প্রেমে। তাই সুযোগ পেলেই একে অন্যের সাথে দেখা করতে ছুটে যান প্রেমিক-প্রেমিকারা।