সীমান্ত বাতি নিভিয়ে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২১ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বুধবার (২১শে মে) রাত ৪ টার দিকে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দ্বায়িত্বপূর্ণ এলাকা উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৭ এর ১০ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়।
এরপর জয়ধরভাঙ্গা বিওপির টহল দল তাদের আটক করে। তারা সবাই বাংলাদেশের খুলনা ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকার নাগরিক। এর মধ্যে ৬ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ১৩ জন শিশু রয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের মাজিরগাতি এলাকার ইসরাইল ফকিরের স্ত্রী আলেয়া (৫৫), তার ছেলে রব্বিল ফকির (২২), পুত্রবধূ শিমলা (১৯), নাতনী আলিশা (০৩), নাতি আয়ান (৩ মাস), একই এলাকার ইব্রাহিম ফকিরের স্ত্রী হেলেনা (২৭), মেয়ে রোজিনা (৮), ছেলে ইসমাইল (০৫), উপজেলার গাজির হাট ইউনিয়নের গাজির হাট এলাকার ফরহাদ শেখের স্ত্রী স্বপ্না (২৯), ছেলে ফারজানা (১২), মেয়ে আফসানা (৯) ও মরিয়ম (০৩), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার আশিক সরদারের স্ত্রী রোজি (৩৯), তার ছেলে রানা (১৭), মেয়ে আয়েশা (০৪), একই এলাকার আজি এর স্ত্রী শিমা (৩০), মেয়ে কুলসুম (১০), ছেলে রহমান (০৬), রেহমান (০৫), মেয়ে আফরিন (০৩) এবং ছেলে রেহমাত আলী (০২)।
এদের মধ্যে ৬ জন নারী ও একজন পুরুষসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে বিজিবির পক্ষ থেকে সদর থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে বাকীরা শিশু হওয়ায় তাদের কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
আটককৃত ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবত ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করছিল। এদের মধ্যে কেউ বাসা বাড়িতে আবার কেউ গ্যারেজে মেকানিকের কাজ করতেন। পরে গত ২১শে মে ভারতীয় পুলিশ তাদেরকে গুজরাট এলাকা হতে আটক করে বিমানযোগে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসযোগে ২২শে মে (বুধবার) রাত ২টায় নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর বিএসএফের ৯৩ ব্যাটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের নিকট হস্তান্তর করে।
পরবর্তীতে টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প তাদেরকে টিয়াপাড়া বড়বাড়ি সীমান্ত গেইট দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে। পরে তারা বৃহস্পতিবার (২২শে মে) সকাল বেলা বাংলাদেশের বড়বাড়ি এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময়ে স্থানীয়রা তাদের দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে বিজিবির স্থানীয় জয়ধরভাঙ্গা ক্যাম্পে খবর দেয়া হলে ক্যাম্পের টহল দল তাদের আটক করে। এরপর তাদের বিজিবির নতুন ক্যাম্প বড়বাড়িতে নেয়া হয়। সেখান থেকে আজ দুপুরে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে যায় বিজিবি।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম বদরুদ্দোজা বলেন, নারী, পুরুষ ও শিশু সহ ২১ জনকে আটকের পরে বিজিবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে। মামলা হওয়ার পর তাদের আদালতে তোলা হবে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, জয়ধর ভাঙ্গা ক্যাম্পের বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে নারী শিশুসহ ২১ জনকে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশের পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে আমাদের টহল দল সীমান্তে তাদের আনাগোনা দেখে আটক করে। ইতিমধ্যে আমাদের ব্যাটালিয়ন কোম্পানি ও ক্যাম্প কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিএসএফের কাছে জানতে চেয়েছি তারা কেন অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে তাদেরকে ফেরত পাঠাল। বিজিবিকে জানিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো উচিত ছিল। এ বিষয়ে আমরা বিজিবির পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা দায়ের করব। তবে যারা শিশু রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নয়। সীমান্তে বিজিবি সর্বদা সচেতন আছে। যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলায় বিজিবির টহল দল ২৪ ঘন্টা সীমান্তে কড়া টহলদারি করছে।
ডিবিসি/এএমটি