শান্ত, সুন্দর সাগরই যখন হিংস্র হয়ে ওঠে, তখন তার রূপ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সাগরের সেই ভয়াল গর্জন আর প্রলয়ংকরী রূপের নামই সুনামি।
সুনামি কেন আঘাত হানে?
অনেকেরই ধারণা, সুনামি মানে হয়তো বিশাল কোনো সামুদ্রিক ঢেউ। ধারণাটি আংশিক সত্য, কিন্তু এর পেছনের কারণ আরও অনেক গভীর। সুনামির মূল কারণগুলো হলো:
১. প্রধান কারণ - সামুদ্রিক ভূমিকম্প:
সুনামি সৃষ্টির প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই দায়ী থাকে সমুদ্রের তলদেশে ঘটে যাওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্প। আমাদের পৃথিবী অনেকগুলো বিশাল প্লেটের ওপর সাজানো, যাদের নাম টেকটোনিক প্লেট। যখন এই প্লেটগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন একটি প্লেট আরেকটির নিচে ঢুকে যায়। এই সময় যদি সমুদ্রের তলদেশের কোনো প্লেট হঠাৎ করে কয়েক মিটার ওপরে উঠে আসে বা নিচে নেমে যায়, তখন এর ওপরে থাকা পুরো পানির স্তম্ভটিও স্থানচ্যুত হয়। এই বিপুল পরিমাণ পানি তখন ঢেউ আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঢেউ-ই হলো সুনামি। বিশেষ করে, রিখটার স্কেলে ৭.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প থেকেই ভয়াবহ সুনামির জন্ম হতে পারে।
২. অন্যান্য কারণ:
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: সমুদ্রের নিচে বা উপকূলের কাছাকাছি থাকা কোনো আগ্নেয়গিরি যদি প্রচণ্ড শক্তিতে বিস্ফোরিত হয়, তবে সেই বিস্ফোরণের অভিঘাতেও সুনামি তৈরি হতে পারে।
ভূমিধস: যখন পাহাড়ের বিশাল কোনো অংশ বা সমুদ্রের তলদেশের মাটি ধসে পড়ে, তখনও বিপুল পরিমাণ পানি সরে গিয়ে সুনামির সৃষ্টি করতে পারে।
সুনামি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে?
যখন সুনামি গভীর সমুদ্রে থাকে, তখন এর গতি থাকে ঘণ্টায় ৮০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার, যা একটি জেট প্লেনের গতির সমান! সেই দ্রুতগতির ঢেউ যখন উপকূলের কাছাকাছি অগভীর পানিতে এসে পৌঁছায়, তখন এর গতি কমে যায়, কিন্তু জমে থাকা বিপুল শক্তি ঢেউয়ের উচ্চতাকে দানবীয় আকারে বাড়িয়ে তোলে। সুনামির ঢেউ ৩০ মিটার বা প্রায় ১০০ ফুট (১০ তলা ভবনের সমান) উঁচুও হতে পারে।
সুনামি সাধারণ ঢেউয়ের মতো উপকূলে আছড়ে পড়েই শেষ হয়ে যায় না। এটি একটি শক্তিশালী জলের স্রোতের মতো স্থলভাগের বহু কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ডিবিসি/এফএইচআর