মাত্র ২৭ বছরের জীবনে গান গেয়ে, সুর করে মাতিয়ে দিয়ে গেছেন হ্যাপি আখন্দ।
'আবার এলো যে সন্ধ্যা', 'কে বাঁশি বাজায় রে' গান দিয়ে তার সময়ের তরুণদের মন জয় করেছিলেন তিনি। সেই গান এখনো সমানভাবে জনপ্রিয়। মাত্র ২৭ বছরের জীবন পেয়ছিলেন তিনি। গান গেয়ে, সুর করে মাতিয়ে দিয়ে গেছেন হ্যাপি আখন্দ। আজ তার জন্মদিন।
হ্যাপি আখন্দ। স্বাধীন বাংলাদেশে আধুনিক সঙ্গীতের রীতিমত ঝড়তোলা এক নাম। ছোটবেলা থেকেই হেঁটেছেন সুরের ভুবনে। ১০ বছর বয়সেই গিটারে ছন্দ তুলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে পিয়ানো তবলা বাজানোয়ও হয়ে ওঠেন পারদর্শী।
জন্ম পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে ১৯৬০ সালের ১২ অক্টোবর। তাঁর ছিল সহজাত সঙ্গীতপ্রতিভা। শুরুর দিকে বড় ভাই সঙ্গীত শিল্পী লাকী আখন্দের সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন হ্যাপি। সবধরণের বাদ্যযন্ত্রে তার ছিলো সহজিয়া পারদর্শিতা।
১৯৭৩ সালে দুই ভাই মিলে গড়েন একটি ব্যান্ড। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডটি ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর হ্যাপীর নামে ব্যান্ডের নামকরণ হয় ‘হ্যাপীটাচ’। এছাড়া হ্যাপী নিজে ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’ নামে একটি ব্যান্ড গড়ে ছিলেন। ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তাঁর।
সে সময় গিটারের তালে তালে গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। এভাবেই সঙ্গীতের সঙ্গে এক নিরিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
তবে ১৯৭৫ সালে এস এম হেদায়েতের লেখা ও বড় ভাই লাকী আখন্দের সুরে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি গেয়ে তিনি পান তুমূল জনপ্রিয়তা। প্রথমে বিটিভিতে প্রচারিত হয়, এরপর গানটি ব্যবহার করা হয় সালাউদ্দিন জাকি নির্মিত- সুবর্ণা মুস্তফা ও রাইসুল ইসলাম আসাদ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’তে। এই সিনেমায় গায়ক হিসেবেই অভিনয় করেন হ্যাপী। গানটি এখনো একটি মাইলফলক হয়ে আছে বাংলা গানের ইতিহাস যাত্রায়।
এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝর্ণা’, ‘স্বাধীনতা তোমায় নিয়ে গান তো লিখেছি’ এমন বেশ কিছু গান গেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এছাড়া তাঁর সংগীত আয়োজনে ফেরদৌস ওয়াহিদের ‘এমন একটা মা দে না’, ফিরোজ সাঁইয়ের ‘খুইলাছে রে মাওলা’গানগুলো আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
তবে, সাফল্যের চুড়ায় থাকা এই মানুষটির সঙ্গীত জগতের পথচলা থেমে যায় হঠাৎ করেই। ১৯৮৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বর মাত্র ২৭ বছর বয়সে ভক্ত অনুরাগীদের কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ক্ষণজন্মা হ্যাপী আখন্দ। আজ তিনি নেই কিন্তু বাংলা গানের ভুবনে অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম তাকে বাঁছিয়ে রাখবে অনন্তকাল।