গাইবান্ধায় কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থা থেকে আলাদা করা জমজ দুইবোন তোফা-তহুরা ভালো আছে। হেসে-খেলেই দিন কাটছে তাদের। অন্যদিকে, অস্ত্রোপচারে আলাদা হওয়া পাবনার জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়াও সুস্থ আছে। আলাদা হওয়ার পর রাবেয়া সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও, এখনও চলাফেরার শক্তি নেই রোকাইয়ার।
২০১৬ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর কোমর জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয় গাইবান্ধার দুই শিশু তোফা-তহুরা। দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওই বছরের ৭ই অক্টোবর তাদের ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দু' দফা অস্ত্রোপচার শেষে ২০১৮ সালের ৫ই ডিসেম্বর বাড়ি ফেরে দুই বোন।
পশ্চিম ঝিনিয়া গ্রামে ‘তোফা তহুরার সুখের নীড়' এ গিয়ে দেখা গেলো হাসিখুশি দুই শিশুকে। দুই বোনের মধ্যে তোফা অনেক কথা বললেও অনেকটাই শান্ত তহুরা। তাদের মা জানান, কিডনি সহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে তহুরার। তোফা-তহুরাকে নিয়ে বাকিটা জীবন ভালো থাকতে চান রাজু-শাহিদা দম্পতি।
তোফা ও তহুরার মা শাহিদা বেগম বলেন, তহুরাকে নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি আমি। কয়েকদিন পরপর নিজের টাকা দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। আমার নিজে চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, নিয়মিত চেকআপের জন্য ঢাকা ও রংপুরে যাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই পরিবারটির।
তোফা-তহুরার এক প্রতিবেশী বলেন, তহুরার কিডনির সমস্যা। মাঝে মাঝে ঢাকা ও রংপুরে যেতে হয়। টাকা-পয়সার অনেক সমস্যা। তাদের জন্য যদি কোন আর্থিক ব্যবস্থা রাখা হয় তাহলে ভালো হয়।
এদিকে, পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামে স্কুলশিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগমের জমজ সন্তান রাবেয়া-রোকাইয়া। ২০১৬ সালের ১৬ই জুলাই জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেয় তারা। ক্রেনিয়ো পেগাজ নামের বিরল রোগে আক্রান্ত এই শিশুদের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৭ সাল থেকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তির পর দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ চিকিৎসদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে চিকিৎসা। অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসায় অংশ নেন হাঙ্গেরির একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সাড়ে তিন বছর চিকিৎসা শেষে চলতি বছর ১৫ই মার্চ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে রাবেয়া-রোকাইয়া।
রাবেয়া পুরোপুরি সুস্থ হলেও পুরোপুরি চলার শক্তি নেই রোকাইয়ার। পরিবারের আশা রোকাইয়াও একদিন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।
রাবেয়া-রোকাইয়ার মা বলেন, একটি বাচ্চাই ভালো আছে তবে আরেকটি বাচ্চার কিছু নিউরোলজিকাল সমস্যা আছে। আমি আশাবাদী সেও সুস্থ হয়ে যাবে।
রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা জানান, সবার কাছে দোয়া চাই যেন ওরা আট-দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতই বড় হয়ে উঠতে পারে।
প্রতি ৬০ লাখ শিশুর মধ্যে একজন বিরল এই রোগ নিয়ে জন্ম নেয়। এ ধরনের অপারেশন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম বলে জানান চিকিৎসকরা।