স্বাধীনতার ৫০ বছরের পথচলায় বিচার বিভাগের রয়েছে গৌরবোজ্জল ভূমিকা। একই সঙ্গে জনগণের কাঙ্খিত আস্থা অর্জনে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে এখনও।
সংবিধানের উপর কোনো আঘাত আসলে রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছে বিচার বিভাগ। সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ থেকে আলাদা করে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠাই সবচেয়ে বড় অর্জন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে স্বাধীনতা লাভের পর দ্রুততম সময়ে প্রণয়ন করা হয় একটি পুর্ণাঙ্গ সংবিধান। সৃষ্টি করা হয় সুপ্রিমকোর্ট। ১৯৭২ সালের ১৮ই ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্ট উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের পথচলা।
৫০ বছরের পথচলায় বিচার বিভাগের রয়েছে গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা। আইনের শাসন, আইনের ব্যাখ্যা, আইনের সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংবিধান রক্ষায় সোচ্চার বিচার বিভাগ।
মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর শাসন ও আইন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করার কারণে নতুন দ্বার উন্মেচিত হয়।
নদী, পাহাড় রক্ষা, পরিবেশ দূষণ রক্ষা ও অবৈধ দখলবাজদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে কিংবা স্বপ্রণোদিত হয়ে সময়াপযোগী ও ঐতিহাসিক রায় রয়েছে সুপ্রিমকোর্টের।
সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসন ক্ষমতাকে অবৈধ ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিমকোর্ট। সংবিধান রক্ষায় সামরিক শাসনকে সব সময় নিরুৎসাহিত করেছে বিচার বিভাগ। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধরে রাখা ছিলো সাহসী পদক্ষেপ।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার, জাতীয় চার নেতার বিচার কাজ শেষ করার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায়ও মোচন করে বিচার বিভাগ।
সংবিধান প্রণেতা ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম বলেন, 'গর্বিত আমাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করছেন এবং তার ওপরে মানুষের যে শ্রদ্ধা সেটা আমি মনে করি যে বড় অর্জন। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সময় যেভাবে আঘাত এসেছিল সেখানে বিচার বিভাগ খুব শক্তভাবে বিলডাব করতে সক্ষম হয়েছে।'
সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, 'বিচার বিভাগের উন্নতি হয়েছে কিন্তু জন সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে অর্থাত মামলার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে ধরনের উন্নয়ন হওয়া দরকার ছিল সে ধরনের উন্নয়ন হয়নি।'
মামলার জট, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বড় প্রতিবন্ধকতা মনে করেন তারা।
মামলার জট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বিচারক সংকট, অবকাঠামোগত সংকট, উচ্চ আদালতে বিচার নিয়োগে দলীয় বিবেচনা ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি দূর করে বিচার বিভাগ আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এমন প্রত্যাশা সবার।