বিবিধ, লাইফস্টাইল

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের আদর্শ ব্যবধান!

Faruque

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ২৯শে নভেম্বর ২০২১ ০১:৩৫:২০ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

দুজন যদি দুজনার হয়ে ওঠেন, নিজেদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ ঠিকঠাক থাকে, তাহলে দেখা যায়, বয়সের ব্যবধান কোনো ব্যাপারই না।

সামিয়ার বিয়ে হয়েছিল স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পরই। স্বামী তাঁর চেয়ে ১২ বছরের বড়। সামিয়া মনে করেন, তাঁদের বোঝাপড়ায় কোনো সমস্যা হয়নি। কেননা, তাঁর স্বামী জড়িত ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। ফলে, দিলখোলা মানুষ। আবার সামিয়া নিজেও পেশাজীবী নারী। দুজনেরই ব্যস্ত জীবন। কিন্তু অফিস শেষে দুজনে বাসায় ফিরে একান্তে কিছুটা সময় ঠিকই পার করতেন। ছুটিছাঁটায় বাইরে যেতেন।
এই দুই উদাহরণের উল্টোটাও ঘটে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বামী হয়তো নিজের কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে বয়সে বেশ ছোট স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বটাই বেশি পালন করছেন, পরস্পরকে বোঝার জন্য সময় দিচ্ছেন না। তারপর সন্তান লালন-পালন ইত্যাদি। ধীরে ধীরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। সন্তানও একসময় বড় হয়, কিন্তু তখন স্বামী বার্ধক্যের পথে। তাঁর উদ্যম ততটা নেই, যতটা তখনো স্ত্রীর মধ্যে বিদ্যমান। ঘটনা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তখন কেউ কাউকে আর সহ্যই করতে পারেন না। দুজনই বলতে থাকেন, ‘তোমার কাছ থেকে আমি তো কিছুই পাইনি।’ সামাজিকতা মেনে হয়তো অনেকেই এক ছাদের নিচে ভালোবাসাহীন সম্পর্ক টেনে বেড়ান, আবার কেউ কেউ সম্পর্কটার ইতি টানেন।

একটা সময়ে মূলত পাত্রের যোগ্যতা বা অবস্থান বিচার করেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করতেন মা-বাবারা। পাত্রের বয়স কত, তা বিবেচনাতেই আনা হতো না। সে কারণে আজ থেকে ২০-৩০ বছর বা তারও আগে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান আট, নয়, কখনো ১০ বা ১৫ ছাড়িয়ে যেত। এরপর বিয়ের ব্যাপারে মেয়েদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ ও মতামত ধীরে ধীরে জোরালো হতে থাকে। মেয়েরা সমবয়সী বা কিছুটা বড় ছেলেদের জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করতে চাইলেন বেশি। বয়সের ব্যবধান তিন বা পাঁচ বছর ছাড়িয়ে গেলে অভিভাবকদেরও ভ্রু কুঁচকাত। তাঁদের আশঙ্কা ও সন্দেহ, বয়সের ব্যবধান বেশি হলে পদে পদে মতের অমিল হতে পারে, দেখা দিতে পারে প্রজন্মের ব্যবধান বা জেনারেশন গ্যাপ। দুই প্রজন্মের দুজন মানুষ পরস্পরকে বুঝতে পারবেন না, কষ্ট হবে মানিয়ে নিতে। সমবয়সীদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো হয়—এমন ধারণা পোষণ করতে শুরু করলেন অনেকে।

ইদানীং অনেক মেয়েকেই দেখা যায় একটু বেশি বয়সী কাউকে স্বামী হিসেবে নির্বাচন করতে দ্বিধা করছেন না। এর কারণটা হয়তো বৈষয়িক। এমন মনে করেন বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যাপক রেহনুমা খানম। তাঁর নিজের দুটি মেয়ে রয়েছে। বড়টির সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে সাত বছরের বড় এক প্রকৌশলীর সঙ্গে। রেহনুমা বলেন, ‘যেহেতু আমার মেয়ের কোনো নিজস্ব পছন্দ ছিল না, তাই আমরা যখন ওর জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করলাম। স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব দিলাম পাত্রের যোগ্যতা ও প্রতিষ্ঠার ওপর। আর আজকালকার যুগে একটা ভালো চাকরি পেতে ও মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে পৌঁছাতে একটা ছেলের খানিকটা বয়স হয়েই যায়। তার পরও বয়সের ব্যবধানের কথা ভেবে আমরা খানিকটা দমেই গিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ে যখন কোনো আপত্তি করেনি, তখন আমরাও নিশ্চিন্ত হলাম।’ রেহনুমার নিজের বিয়ে হয়েছিল সহপাঠীর সঙ্গে, দাম্পত্য জীবন খুবই নির্বিঘ্ন ও সুখের হলেও সমবয়সের বিয়ের কারণে যথেষ্ট সংগ্রাম ও চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে তাঁদের।

পারস্পরিক সমঝোতা, বিশ্বাস আর বোঝাপড়াতেই একটি দাম্পত্য সম্পর্ক ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং মজবুত হয়। এখানে বয়সে বেশ বড় স্বামীকে স্ত্রী আস্থা আর ভালোবাসার জায়গায় রাখতে চান না। স্বামীর আচরণে যদি ‘প্যারেন্টিং’ ফুটে ওঠে, তবে সে সম্পর্ক কি সুখের হবে? আর স্ত্রীও যদি প্রতি পদক্ষেপে অপরিপক্কতা দেখান তবে সেটাও কি ভালো? বরং দুজনে যত খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসবেন, বয়সের ব্যবধান ততই তুচ্ছ হয়ে উঠবে। দুজন যদি দুজনার হয়ে ওঠেন, নিজেদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ ঠিকঠাক থাকে, তাহলে দেখা যায়, বয়সের ব্যবধান কোনো ব্যাপারই না। বয়স তখন ‘অসম’ হলেও পারস্পরিক বোঝাপড়াটা হয়ে যায় ‘সম’।

সাধারণত মেয়েরা মনের দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে একটু আগেই পরিপক্কতা লাভ করে। আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক মিল থাকাটা জরুরি। তাই মনে করা হয় যে, স্বামী যদি স্ত্রীর চেয়ে ৩ বছরের বড় হয় তবে দু`জনের মানসিক পরিপক্কতা সমান হবে। তা ছাড়া, ৩ বছর বড় হলে স্বামী একটু আগে পড়ালেখা শেষ করে কোনো একটা পেশা বেছে নেবে এবং নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সময় পাবে। এটাও বয়সের ব্যবধান ৩ রাখার একটা কারণ। এখানে একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, কিশোর বয়সে মেয়েদের মানসিক বিকাশ ছেলেদের তুলনায় দ্রুত হয়। কিন্তু ২০ থেকে ৩০ বছর সময়কালটায় এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।

উচ্চতার অনুপাত:

প্রথমে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার আদর্শ উচ্চতার বিষয়টি জানা যাক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে উচ্চতার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যবধান হচ্ছে ১২ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ স্বামী বা প্রেমিককে হতে হবে ১২ সেন্টিমিটার বেশি লম্বা। কেন? কারণ, এতে নাকি পরস্পরকে আলিঙ্গন করা ও চুমু খাওয়ায় সুবিধা হয়।

এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মেয়ে সাধারণত নিজেকে সযত্নে রক্ষা করতে চান। স্বামী বা প্রেমিকের উচ্চতা বেশি হলে, তিনি অনেক বেশি নিরাপদবোধ করেন। আসলে ছেলেদের উচ্চতা সাধারণতভাবে মেয়েদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে ১০ সেন্টিমিটার বেশি হলে, দেখতে সুন্দর লাগে; মানানসই মনে হয়। এই ব্যবধান দু`পক্ষের লিঙ্গ পরিচয়কেও আরও স্পষ্ট করে তোলে। স্বামী বা প্রেমিককে তখন অনেক বেশি ম্যানলি মনে হয় এবং স্ত্রী বা প্রেমিকাকে আরও বেশি কমনীয় ও সুন্দর লাগে। উচ্চতার ব্যবধানটি অতিরিক্ত হলে দেখতে ভালো দেখায় না।

বেতনের অনুপাত:

বেতন বা আয়ের ব্যাপারটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোন কোন জরিপ অনুসারে, স্বামীর বেতন বা আয় স্ত্রীর দেড় গুণ হলে ভালো। এতে পরিবারের সুখের সূচক বাড়ে। আজকাল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বামী ও স্ত্রী দু`জনই চাকরি করেন বা আয় করেন। তবে ঐতিহ্যবাহী ধারণার প্রভাবে অনেকের মতামতা এমন যে, পরিবারে স্বামীর আর্থিক দায়িত্ব বেশি বহন করা উচিত। তাই স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর আয় বেশি হওয়া আবশ্যক বলেই অনেকে মনে করেন। এতে এক দিকে স্বামীর মুখ রক্ষা হবে, অন্যদিকে স্ত্রীর নিরাপত্তাবোধ বাড়বে। তবে, এ ব্যবধান যত বেশি হবে তত ভালো।

শ্বশুর-শাশুড়ি প্রসঙ্গ:

আজকালকার ছেলে-মেয়েরা প্রবীণদের সঙ্গে বসবাস করতে চান না। অথচ বাবা মা`র যত্নে আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। কিন্তু অনেক দম্পতি নিজেদের মতো করে থাকতে চান; গড়তে চান নিজস্ব একটা ভূবন। যেখানে অন্য কেউ থাকবে না। তারা চান, তাদের বিবাহিত জীবনের গুণগত মান উন্নত করতে। এই চাওয়াটা ঠিক। কিন্তু পিতা-মাতা বা শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর যত্ন নেওয়ার গুরুত্বও তাদের বুঝতে হবে। তারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে সন্তান বড় করেছেন। তাই পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে পিতা-মাতা বা শ্বশুর-শ্বাশুড়ী তাদের প্রয়োজনে ছেলেমেয়েকে কাছে পান।

আরও পড়ুন