আপৎকালীন সময়ে বিনা সুদে ব্যাংক ঋণ, স্যাটেলাইট ভাড়া মওকুফ চান বেসরকারি টিভি মালিকরা।
বিজ্ঞাপনি সংস্থাগুলোর খবরদারি, বিদেশি চ্যানেলে আসক্তি- এমন প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বেসরকারি টেলিভিশন খাতকে। এর সাথে যোগ হয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব। সরকারি প্রণোদনা নয়, তবে সঙ্কট কাটাতে আপৎকালীন সময়ে বিনা সুদে ব্যাংক ঋণ, স্যাটেলাইট ভাড়া মওকুফসহ বেশ কয়েক দফা প্রস্তাব করেছেন বেসরকারি টেলিভিশনের উদ্যোক্তারা।
সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। বাংলাদেশে এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের বড় অংশ জুড়ে আছে বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল। বর্তমানে সম্প্রচারে আছে ৩০টি চ্যানেল। আরও কয়েকটি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে আসার অপেক্ষায় আছে।
শুধু সংবাদ প্রচারই নয়, প্রান্তিক এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানও প্রচার হয় এই সম্প্রচার মাধ্যমে। দেশের যে কোনও দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা দিয়ে যায় এই গণমাধ্যম। ৭ দিন ২৪ ঘন্টা কাজ করে যান সংবাদকর্মীরা। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় নিয়েও রাত দিন সংবাদের পেছনে দৌঁড়াচ্ছেন সম্প্রচার কর্মীরা। সেই কর্মীরা আছেন আশঙ্কায়। আছে বেতন না পাওয়ার ঝুঁকিও।
এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সহযোগিতা চাইলেন সম্প্রচার খাতের উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি সাটেলাইট ভাড়াও মওকুফের দাবি করেছেন তারা।
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'চাইলেও আমরা এ খাত বন্ধ করতে পারছিনা। কারণ আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের কাছে খবর পৌঁছে দেয়া। যে কারণে আমাদের কর্মীদের সবসময় মাঠে থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের একটা আবেদন ছিল। আমাদের সহজ সরলভাবে একটা ঋণ দেয়া হোক। আমরা ব্যাংকের মাধ্যমেই কর্মীদের বেতন দিয়ে থাকি। তাই প্রতিটা ব্যাংকই জানতে পারছে আমাদের কর্মীদের কত টাকা বেতন দিতে হয়। ব্যাংক চেকের মাধ্যমে বা অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রেখে যে বেতনটা দেয়া হতো সেটা এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বেতনটা দিয়ে দিক। আর আমাদের নামে সেই ঋণটা ক্রিয়েট করুক। এই সুদমুক্ত ঋণ পেলে আমাদের কর্মীদের বাঁচাতে পারব। এর আগে, বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করার সময়ও কোনও দুর্যোগ হলে তারা স্যাটেলাইট ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছে। আর এখনতো আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট।' করোনা পরিস্থিতিতে স্যাটেলাইট ভাড়া যেন মওকুফ করা হয় বিষয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মাহফুজুর রহমান।
আপতকালীন সময়ে অন্যান্য খাতের মত সম্প্রচার মাধ্যমকে সহযোগিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়।
এ বিষয়ে ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগ নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্যাবল অপারেটররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের অনুষ্ঠান দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা উদ্যোগ নিতে হবে কিভাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এ আর্থিক সঙ্কট কাটানো যায়।'
সরকারি নানা উদ্যোগের প্রচারে সংবাদপত্রকে বিজ্ঞাপন দেয় সরকার। একইভাবে সম্প্রচার মাধ্যমের জন্যেও বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি।
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) সভাপতি রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, 'সংবাদপত্রের জন্য যেমন সরকারের একটি বাজেট থাকে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচার করা হয় টাকার বিনিময়ে। বিনামূল্যে না দিয়ে একই নিয়মে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি এমন বাজেট পায় তাহলে আর্থিক সঙ্কট অনেকটাই কাটতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন।'
৩০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কর্মরত প্রায় ১২ হাজার কর্মীর দুশ্চিন্তা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন উদ্যোক্তরা।