বাংলাদেশ, রাজনীতি, জেলার সংবাদ, অপরাধ

হঠাৎ যেন ফিরেছে আগুন সন্ত্রাস

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:২০:০১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া এলাকায় গত শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সিরাজগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ছিলো সেদিন। সকাল ১১টার দিকে সদর উপজেলার পাইকপাড়া মোড়ের দিকে আসতে থাকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পাইকপাড়া মোড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শান্তি সমাবেশের সমর্থনে থাকা কিছু আওয়ামী লীগ কর্মীকে তারা ধাওয়া দেয়। সে সময় সাধারণ মানুষও আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে। ধাওয়ার এক পর্যায়ে মুহুর্তেই ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বিএনপির সমর্থকেরা। এ সময় বেশ কিছু দোকান পাট ভাঙচুর করা হয়।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বনবাড়িয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া মহল্লার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন আমরা সকালে পাইকপাড়া বাজারে বইসা আছিলাম। হঠাৎ একদল মানুষ আইসা ধাওয়া দিলো। চোখের সামনে মোড়ের ওপর রাখা ম্যালা গুলান মোটরসাইকেল পোড়ায় দিয়া গেলোগা। মনে হইলো মাঝে যেবা বাস-ট্রাকে আগুন দিয়া মানুষ মারা হইলো সেবাই আবার হইতেছে।’ তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, ‘আমরা শান্তিতে থাইকবার চাই। আগুন দিয়া মানুষের ক্ষতি করা দেইখপার চাই না।’

কলেজ ছাত্র সিয়াম জানায়, তাকে বাবা ও ভাই মিলে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। মাত্র দুই মাস হলো মোটরসাইকেলটি কেনা হয়েছে। সেদিন সকালে কেনাকাটার জন্য বাজারে আসলে হঠাৎই দুই পক্ষের রেষারেষি শুরু হয়। এ সময় অপরদিক থেকে আসা বিএনপি কর্মীরা ধাওয়া দিলে সিয়াম কিছু বুঝতে না পেরে আতঙ্কে বাইক রেখেই দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। নিমিষেই তারা চোখের সামনে প্রায় ১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে চলে যায়। এর মধ্যে তার শখের বাইকটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ আমাদের এই ক্ষতিপূরণ কে দিবে? আমরা এর বিচার চাই আর যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ চাই।’

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়াহরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত ১১ই ফেব্রুয়ারী আমাদের শান্তি সমাবেশ ছিলো। সেদিন বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিও ছিলো। সেদিন সকাল ১১টার দিকে হঠাত পাইকপাড়া বাজারে এসে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সবাই আতঙ্কে পালিয়ে গেলে তারা ১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে চলে যায়। ২০১৪-১৫ সালে যেভাবে বিএনপি-জামাত মিলে যেভাবে আগুন সন্ত্রাসে মেতে উঠেছিলো ঠিক একই ভাবে তারা নতুন কৌশলে এই অগ্নি সন্ত্রাসের পায়তারা করছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহবান জানান।

ঘটনার পর সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে। বিএনপির কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। বিএনপির পদযাত্রায় বাধা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি তৈরি করছে। বিএনপি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে হামলা চালায়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। দলের পক্ষে একটি মামলা করেন শিয়ালকোল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন। আরেকটি মামলার বাদী উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম।


সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), হুমায়ুন কবির জানান, পৃথক দুটি মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলে ৯৮৬ জনকে আসামী করা হয়েছে। বেশ কিছু আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন