প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় দেশব্যাপী ৩ দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। হিট স্ট্রোক তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতার একটি গুরুতর রূপ। গরমে তাপ তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় জানা জরুরি। আর প্রতিরোধ করার জন্য লক্ষণগুলোও জানা জরুরি।
তীব্র গরমের কারণে অসুস্থতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা (১০৪° ফারেনহাইট/৪০° সেলসিয়াসের উপরে), গরম এবং শুষ্ক ত্বক (কোনো ঘাম থাকবে না), দ্রুত স্পন্দন, তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, বিভ্রান্তি এবং অচেতনতা। আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক সময় পেশী ক্র্যাম্প এবং দুর্বলতাও অনুভব করতে পারেন। লক্ষণগুলো জেনে রাখুন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
লক্ষণগুলো টের পাওয়ার সাথে সাথে যা করবেন-
১. এ সময় হাইড্রেটেড থাকুন। সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন, এমনকি যদি আপনি তৃষ্ণার্ত নাও হন।
২. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। কারণ, এগুলো ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩. শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সন্ধান করুন বা বায়ু সঞ্চালনের জন্য ফ্যান ব্যবহার করুন।
৪. হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন এবং বাইরে গেলে ছায়ায় থাকুন।
৫. দিনের উষ্ণতম সময়ে কঠোর কার্যকলাপ এড়িয়ে চলুন। যদি আপনাকে শারীরিক পরিশ্রম করতেই হয়, তবে ছায়াযুক্ত বা শীতল জায়গায় ঘন ঘন বিরতি নিন।
৬. সূর্যের রশ্মি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন, সানগ্লাস এবং একটি চওড়া টুপি পরুন। অতিরিক্ত ছায়ার জন্য ছাতা বা চাদর ব্যবহার করুন।
৭. শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থদের প্রতি নজর রাখুন। কারণ, তারা গরমের সময়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
যদি হিট স্ট্রোকের সন্দেহ হয়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত একটি শীতল ও ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে যান, পোশাক ঢিলা করে দিন এবং ত্বকে ঠান্ডা পানি বা বরফের প্যাক লাগান। জ্ঞান ফিরলে পানিতে চুমুক দিতে বলুন, তবে অজ্ঞান হলে তরল দেবেন না। দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হিট স্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হলে জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।
গরমের সময় দরকার আমাদের খাবারের তালিকা ও জীবনযাপনের ধরনে পরিবর্তন আনার। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এমন খাবার খাওয়া উচিত যেগুলো শরীরকে ঠান্ডা এবং হাইড্রেটেড রাখে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময় আমাদের ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে অনেকটা পানি বের হয়ে যায়। যে কারণে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হতে পারে।
গরমে সুস্থ রাখবে এই ৫ খাবার-
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন খাবার সম্পর্কে যেগুলো আমাদের এই গরমেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১. শশা: গরমের সময়ে একটি উপকারী খাবার হলো শশা। এতে ক্যালোরি থাকে কম এবং এটি হাইড্রেটিং একটি খাবার। আপনার প্রতিদিনের সালাদ, স্মুদি কিংবা অন্যান্য ডিশ তৈরিতে রাখতে পারেন শশা। এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে তা আপনাকে গরমেও হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করবে। তাই গরমের সময়ে শশা থাকুক আপনার খাবারের তালিকায়।
২. তরমুজ: গ্রীষ্মকালীন একটি সুস্বাদু ফল হলো তরমুজ। মিষ্টি স্বাদের এই ফল সবার কাছেই একটি পছন্দের খাবার। এটি গরমের সময়ের জন্য বেশ উপযুক্ত। কারণ, এই ফলের প্রায় নব্বই শতাংশই পানি। এতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। যে কারণে তরমুজ খেলে তা শরীরের অনেক ঘাটতি পূরণে কাজ করে। তাই খাবারের তালিকায় প্রতিদিন তরমুজ রাখুন।
৩. ফুটি: গরমের আরেকটি সুস্বাদু ফল হলো ফুটি। এটে যেমন মিষ্টি, তেমনই হাইড্রেটিং। ফুটি খেলে তা আপনাকে দিনভর সতেজ রাখতে কাজ করবে।সেইসঙ্গে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। হার্ট ভালো রাখতে, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, ওজন কমাতে এবং পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফুটির জুড়ি মেলা ভার। তাই গরমের সময়ে খাবারের তালিকায় যোগ করে নিন সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ফুটি।
৪. টমেটো: গরমের সময়ে একটি উপকারী সবজি হলো টমেটো। লাল টুকটুকে টমেটো দিয়ে তৈরি করা যায় নানা পদের খাবার। এটি লাইকোপেন সমৃদ্ধ। লাইকোপেন হলো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। টমেটোতে প্রচুর পানি থাকে। সেইসঙ্গে থাকে ভিটামিন এ এবং সি। তাই গরমের সময়ে নিয়মিত টমেটো খেতে হবে।
৫. দই: গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত পাতে রাখুন দই। এটি এক ধরনের প্রয়োবায়োটিক, যা এই গরমে আপনাকে সতেজ রাখতে কাজ করবে। সেইসঙ্গে পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও কাজ করবে এটি। দই খেলে তা শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই গরমের সময়ে প্রতিদিন এক বাটি দই খাওয়ার অভ্যাস করুন।
গরমের সময়ে আমরা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি তৃষ্ণার্ত থাকি। তাই এ সময় এমন খাবার খেতে হবে যাতে পানির পরিমাণ থাকে বেশি। এই গরমে আপনাকে নিজের প্রতি আরেকটু বেশি যত্নশীল হতে হবে।
ডিবিসি/আরপিকে