আজ থেকে আশি বছর আগে হিরোশিমা শহরের ওপর 'লিটল বয়' নামে পারমাণবিক বোমাটি নিক্ষেপ করে মার্কিন বিমান এনোলা গে। এতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সেই ভয়াল স্মৃতিকে স্মরণ করে বুধবার (৬ই আগস্ট) সকালে নীরব প্রার্থনায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো জাপান। হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে নগরীর পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং সারা বিশ্ব থেকে আগত প্রতিনিধিরা। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জোরালো আহ্বানের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়।
হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই অনুষ্ঠানে বলেন, "যুদ্ধক্ষেত্রে পারমাণবিক বোমার শিকার হওয়া একমাত্র দেশ জাপান। জাপানি সরকার এমন একটি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে যারা প্রকৃত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কামনা করে।" তিনি বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা এবং 'জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র অপরিহার্য'—এই ধারণার বিষয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মেয়র মাতসুই বলেন, এই পরিস্থিতি সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাঠামোকে ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে যা বহু কষ্টে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি অনুমোদন করার জন্য জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা আমেরিকার দুটি পারমাণবিক বোমায় দুই লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। কেউ তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণে, আবার কেউ তেজস্ক্রিয়তা ও মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ার কারণে মারা যান। সেই বিভীষিকার ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সেদিনের বেঁচে ফেরা মানুষেরা। শিঙ্গো নাইতো নামের একজন বলেন, "বোমার বিস্ফোরণে আমার বাবা মারাত্মকভাবে দগ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার শরীরের চামড়া ঝুলে পড়ছিল—তিনি আমার হাতটাও ধরতে পারছিলেন না।" বোমা হামলার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর, আর সেই হামলায় তিনি তার বাবা ও দুই ছোট ভাইবোনকে হারান।
পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা তৈরির স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে জাপানের পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়াদের সংগঠন 'নিহন হিদানকিও' নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।
বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া আরেকজন সাইতোশি তানাকা বলেন, গাজা ও ইউক্রেনের রক্তপাত তাকে নিজের যন্ত্রণার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, "ধ্বংসস্তূপের পাহাড়, বিধ্বস্ত শহর, আতঙ্কিত শিশু ও নারীদের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য—এ সবই আমার অভিজ্ঞতার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আমরা এমন পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে বাস করছি যা মানবতাকে বহুবার নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।" তিনি পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য বিশ্ববাসীকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
তবে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি ৭০টিরও বেশি দেশ অনুমোদন করলেও আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে। জাপানও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, কারণ তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল।
সূত্র: বিবিসি
ডিবিসি/এমএআর