সারা দেশকে স্তম্ভিত করে দেয়া হোলি আর্টিজানের সেই হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএসপন্থী নব্য জেএমবির পাঁচ আত্মঘাতী জঙ্গির নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। জিম্মিদের উদ্ধারে রাতভর তৎপরতা চালায় র্যাব-পুলিশ। পরদিন সামরিক বাহিনীর 'অপারেশন থান্ডার বোল্টের' মধ্যদিয়ে অবসান ঘটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ১২ ঘণ্টা। ২০১৬ সালের ১লা জুলাইয়ের ওই হামলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরা হল।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার চার মাস আগে গাইবান্ধার সাঘাটায় বৈঠক করে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় হামলার সিদ্ধান্ত নেয় নব্য জেএমবির শুরা কমিটি। হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, সহ-সমন্বয়ক মারজান আর লজিস্টিক সাপোর্টের দায়িত্ব পান বাশারুজ্জামান।
এরপর, পাঁচ আক্রমণকারীকে বাছাই করেন নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার খালেদ। বাছাই করা পাঁচ জঙ্গি হলেন- রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, সামেহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খাইরুল ইসলাম পায়েল।
মে মাসের শুরুতে নির্বাচিত পাঁচ আক্রমণকারীকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ফুলছড়ি চরে নিয়ে অস্ত্র পরিচালনা ও বোমা ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জাহিদ।
ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আর যশোর সীমান্ত দিয়ে রাইফেল, পিস্তল আর বিস্ফোরক আনেন রাশেদ ও সাগর।
জুন মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পাঁচ কক্ষের ফ্ল্যাটে ওঠেন পাঁচ আক্রমণকারীসহ তানভীর কাদেরি, বাশারুজ্জামান, মারজান, তামিম চৌধুরী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। হামলার দিন পর্যন্ত এই বাসাতেই অবস্থান করে সবাই।
জুনের মাঝামাঝি থেকে গুলশান-বনানীর বিভিন্ন হোটেল, রেঁস্তোরা রেকি করা শুরু করে জঙ্গিরা। একপর্যায়ে হামলার জন্য হোলি আর্টিজানকে বেছে নেয় তারা। ১লা জুলাই বিকেলে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বাসা থেকে বের হন পাঁচ সশস্ত্র হামলাকারী, নেতৃত্বে থাকেন রোহান ইমতিয়াজ।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে হোলি আর্টিজানে আক্রমণ করে জঙ্গিরা। সবাইকে জিম্মি করে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযান প্রতিহত করতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমা-গুলিতে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। অবসান ঘটে রুদ্ধশ্বাস ১২ ঘণ্টার।