বর্তমানে চাইলেই বিশ্বের যে কোন প্রান্তের যে কারো সঙ্গে কথা বলা যায় মুঠোফোনে। চাইলে ভিডিও কল করে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখে দেখেও কথা বলা যায়। এসব একদিনে তৈরি হয়নি। অনেক সাধনার ফলে আমরা এ সুযোগ পেয়েছি।
কথা বলার এ মাধ্যমটি আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক আগে। তবে একটি বিষয় প্রায়ই মনে প্রশ্ন জাগায়- আমরা ফোনে প্রথমেই কেন ‘হ্যালো’ বলছি? আজ তার কারণ জানার চেষ্টা করবো -
আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ১৮৭৬ সালে টেলিফোনের উদ্ভাবক স্যার আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথমে টেলিফোন সম্বোধন হিসেবে ‘আহোয়’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যা সাধারণত নাবিকেরা সম্বোধন হিসেবে ব্যবহার করতেন। পরে ‘আহোয়’ শব্দটি বলতে বলতে হ্যালো চালু হয়ে যায়।
এই শব্দটি এসেছে পুরোনো জার্মান শব্দ ‘হ্যালা, হলা’ থেকে। ফেরি নৌকার মাঝিকে ডাকার জন্য একসময় এই শব্দ ব্যবহার করা হতো। ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, ফরাসি, রাশিয়ানসহ সব ভাষাতেই টেলিফোনে প্রথম উচ্চারিত শব্দটি হ্যালো বা তার কাছাকাছি হ্যাল্লো, আ’লো, অ্যালো প্রভৃতি।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের কর্মীরা ‘হ্যালো-গার্লস’ নামে পরিচিতি পায়। সম্বোধনসূচক কিছু বলা একটি প্রচলিত রীতি। সে জন্যই ধীরে ধীরে আ’লো, অ্যালো হয়ে ওঠে হ্যালো।
দ্রুত কমতে শুরু করে মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব। স্যার আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আমেরিকান টেলিফোন অ্যান্ড টেলিগ্রাফ কোম্পানি। যার নাম ‘টিঅ্যান্ডটি’।
হ্যালো, তার মানে আমি যে টেলিফোন ধরে কথা বলতে প্রস্তুত, সেটা জানিয়ে দেওয়া। একই সঙ্গে আমি কে, সেটাও জানানোর প্রথা রয়েছে। যেমন, ‘হ্যালো? আমি অমুক বলছি।’ প্রথম সম্ভাষণটা প্রশ্নবোধক, মানে জানতে আগ্রহী আপনি কে। একই সঙ্গে অবশ্য জানিয়ে দিচ্ছি আমার পরিচয়। টেলিফোন আবিষ্কার হওয়ার পর তিনি ১৮৮৫ সালে ১০ মার্চ তার বান্ধবী ‘মার্গারেট হ্যালো’কে প্রথম ফোন করেন। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে ফোন ধরে প্রথমে ‘হ্যালো’ বলাটা আরও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
এবার আরও একটি তথ্য জানাবো, যা শুনে সত্যিই অবাক হবেন। এই উদ্ভাবক কখনও তার অফিসে টেলিফোন যন্ত্রটি রাখেননি। তিনি শুনতে চাননি, ওপার থেকে কেউ তাকে ‘হ্যালো’ বলুক। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে তিনিই বিশ্ববাসীকে ‘হ্যালো’ বলতে শিখিয়েছিলেন।
অনেকে আবার অন্যরকম দাবিও করছেন। তারা বলছেন, নিজের আবিষ্কারের সুফল এবং কুফল তিনি আগেই দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যন্ত্রটি কাজের হলেও যখন-তখন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নিজের অফিসে কখনোই টেলিফোন রাখতেন না এই বিজ্ঞানী।