দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দেখা দিয়েছে পেঁয়াজ বীজের তীব্র সংকট।
এ দোকান সে দোকান ঘুরেও চাষীরা পাচ্ছেন না কাঙ্খিত বীজ। এ নিয়ে পেঁয়াজ চাষীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা গেছে। তারা ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেও ১ কেজি বীজ সংগ্রহ করতে পারছে না বলে জানান।
করোনাকালীন সময়ে বীজ আমদানীকারকরা হাইব্রীড উচ্চ ফলণশীল জাতের পেঁয়াজ বীজ বিভিন্ন দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী আমদানী করতে না পারায় এ সংকট বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। গত বছর এই বীজ ১হাজার থেকে প্রকারভেদে ২ থেকে ৩হাজার টাকা কেজি দরে সীমাবদ্ধ ছিল। আর এবার তা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার শৈলকুপায় ৬ হাজার ৭শত ৫০ হেক্টরের বেশী জমিতে পিঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। আজ শনিবার শৈলকুপা বাজারের বিভিন্ন বীজ ব্যবসায়ীদের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটা দোকানে দলবেধে বীজের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন চাষীরা। টাকা দিয়েও মিলছে না পেঁয়াজ বীজ। হার্ইরীড জাতের ১কেজি বীজ ১৫ হাজার টাকা আর লাল তীর কিং ১২ হাজার, লাল তীর-বিশ ৭ হাজার টাকায় বিক্রয় হয়েছে। তবে এখন তাও মিলছে না।
উপজেলার মহিষ্ডাাঙ্গা গ্রামের চাষী শ্যামল সরকার জানান, শনিবার তিনি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ২৪শত টাকা মণ। ১ কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম ১২থেকে ১৫ হাজার টাকা। ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে মিলছে না ১ কেজি পেঁয়াজ বীজ। গতবার তিনি এ বীজ কিনেছিলেন ১ হাজার টাকা কেজি দরে। এবার এতো দামের পরও মিলছে না বীজ।
আউশিয়া গ্রামের চাষী রকি বিশ্বাস জানান, তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন। এক বিঘা জমিতে উচ্চ ফলণশীল জাতের পেঁয়াজ চাষ করলে ৬০-৭০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যায়। খরচ আনুমানিক ৫০ হাজারের বেশী। ১কেজি পেঁয়াজ বীজ ভালো হলে তা থেকে যে চারা পাওয়া যাবে তা ১ বিঘা জমিতে রোপন করা যায়।
তিনি আরো জানান, ১৫ হাজার টাকাতেও মিলছে না ১ কেজি পেঁয়াজ বীজ। শতকরা ৫০ জন চাষি আগাম বীজ রোপন করেছিল বীজতলায়। তাদের মধ্যে আবার অর্ধেক চাষির বীজ নষ্ট হয়েছে। এ জন্য আরো সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
শৈলকুপা বাজারের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী দিশারী বীজ ভান্ডারের মালিক রাশেদুল হাসান জানান, তারাও কোন পাইকারী দোকানে মিলাতে পারছেন না চাষীদের চাহিদার বীজ। গত শুক্রবার তিনি ১ কেজি লাল তীর কিং ১১ হাজার টাকা বিক্রি করলেও শনিবার তিনি আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না এ বীজ। ফলে চাষিরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আকরাম হোসেন জানান, শৈলকুপা দেশের অন্যতম পিঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা। তিনিও শুনেছেন পেঁয়াজ বীজের সংকটের কথা।
তিনি জানান, উপজেলাটিতে এবার ৬ হাজার ৭ শত ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বারের থেকে এবার বেশী দামে বীজ বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে অধিক ফলনের জন্য চাষীরা আর দেশী জাতের পেঁয়াজ চাষ করতে চান না। হাইব্রীড জাতের বীজ বাইরের দেশ থেকে আমদানী করতে হয়। করোনাকালীন সময়ে আমদানীকারকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বীজ আমদানী করতে না পারায় এ সংকট হতে পারে।