যশোরের চৌগাছার পুড়াপাড়া কাঠগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামায়াত নেতাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন খবরে এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার কাঠগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন খালি রয়েছে। শূন্যপদ পূরণে কর্তৃপক্ষ গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজর আলী, আন্দুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও জামায়াত নেতা মোস্তফিজুর রহমান, বাথানগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতিয়ার রহমান, মহেশপুর গালর্স স্কুলের সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলামসহ ৬ জন আবেদনপত্র জমা দেয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ১৬ মার্চ যশোরে সরকারি মমিন গার্লস স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় উল্লেখিত ৬ জন প্রাথীর্ই অংশ নেন।
অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় ৬ মাস আগেই কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আমিনুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক তবিবর রহমান মিলে আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজর আলীকে নিয়োগ দেয়ার নামে ৪ লাখ হাতিয়ে নেয়। অথচ নিয়োগ পরীক্ষার পরে তাকে নিয়োগ না দিয়ে আন্দুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, জামায়াত নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রার্থীর নিকট থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য করে তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজের আলী জানান, তার চাকরি হচ্ছে না এমন খবরে তিনি কাঠগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা সমুদয় টাকা ফেরত দিবেন বলে তাকে আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবার (২০ মার্চ) ফজর আলরি কাছ থেকে নেয়া ৪ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয়। আর তাকে এই নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকিও দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, আন্দুলিয়া দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান তার আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ঠ মাদ্রাসার যে ছাড়পত্র সংযুক্ত করেছেন তা ওই মাদ্রাসার সুপার প্রদান করেননি। তিনি সুপারের স্বাক্ষর জাল করে প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপার মাওঃ আব্দুল কাদের।
এছাড়া তিনি মাদ্রাসায় কর্মরত অবস্থায় নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। যার কারণে মাদ্রাসা সুপার তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন বলেও জানা গেছে।
এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকার মানুষ। শিক্ষক নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের ঘটনায় যারা জড়িত তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে কাঠগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তবিবর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিএসসি সহকারী শিক্ষক ফজর আলীর কাছ থেকে স্কুলের উন্নয়নের কথা বলে কিছু টাকা নেয়া হয়েছে। শেষমেষ তার নিয়োগ না হলে আমরা টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, আমরা কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি। তবে মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়োগের ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও মহেশপুর উপজেলার এক জনপ্রতিনিধির সুপারিশ আছে। ফলে আমাদের কিছুই করার নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, গত ১৬ মার্চ যশোরে সরকারি মমিন গালর্স স্কুলে কাটগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। কোন নিয়োগ বোর্ড হলে আমরা সেখান উপস্থিত থাকি মাত্র। অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।