আগামী ১৩ই ডিসেম্বর (শনিবার) রাত এবং ১৪ই ডিসেম্বর (রবিবার) ভোরে আকাশের বুকে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখা যাবে। বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং ‘অদ্ভুত’ উল্কাপাত হিসেবে পরিচিত ‘জেমিনিড’ তার চূড়ান্ত রূপ দেখাবে এই সময়ে। আকাশ পরিষ্কার এবং দূষণমুক্ত থাকলে ঘণ্টায় প্রায় ১২০টি পর্যন্ত উল্কা দেখা যেতে পারে।
তবে এবারের উল্কাপাতের মূল আকর্ষণ এর পেছনের রহস্যময় উৎস। সাধারণ ধূমকেতু নয়, বরং এক অদ্ভুত আচরণের গ্রহাণু থেকে সৃষ্টি হয়েছে এই আলোর ঝরনা।
কেন এই উল্কাপাত ‘অদ্ভুত’?
সাধারণত উল্কাপাত সৃষ্টি হয় কোনো ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া ধুলো ও বরফের কণা থেকে। কিন্তু জেমিনিডের জন্ম ‘৩২০০ ফায়েথন’নামের একটি রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু থেকে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ফায়েথন আদতে একটি গ্রহাণু , কিন্তু এর আচরণ ধূমকেতুর মতো। এটি সূর্যের খুব কাছে চলে যায় এবং এর একটি লেজও তৈরি হয়।
আমেরিকান মেটিওর সোসাইটির জার্নাল এডিটর রবার্ট লান্সফোর্ড জানান, ধূমকেতুর বরফ কণার চেয়ে ফায়েথনের পাথুরে কণাগুলো অনেক শক্ত ও বড়। ফলে এগুলো বায়ুমণ্ডলে বেশিক্ষণ জ্বলে এবং সাধারণ উল্কার চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়।
আকাশে রঙের খেলা জেমিনিড উল্কাপাতের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এর রঙ। ফায়েথনের ধ্বংসাবশেষে প্রচুর ধাতু মিশ্রিত থাকে। বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে এগুলো পুড়ে বিভিন্ন রঙের সৃষ্টি করে কমলা ,হলুদ ,সবুজ নীলসহ ইত্যাদি রঙ।
রহস্যময় ‘সোডিয়াম’ লেজ ফায়েথন গ্রহাণু হওয়া সত্ত্বেও কেন এর ধূমকেতুর মতো লেজ থাকে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই। অ্যারিজোনার লোয়েল অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী কিচেং ঝাং-এর ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফায়েথনের লেজটি আসলে ধুলো বা বরফের নয়, বরং এটি সোডিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অতীতে হয়তো তীব্র তাপ বা নিজের অক্ষে প্রচণ্ড গতিতে ঘোরার কারণে ফায়েথন আংশিক ভেঙে পড়েছিল, যার ফলে এই বিশাল ধ্বংসাবশেষের স্রোত তৈরি হয়েছে যা আজ আমরা জেমিনিড উল্কাপাত হিসেবে দেখছি।
কখন ও কীভাবে দেখবেন? ১৩ই ডিসেম্বর মাঝরাত থেকে ১৪ই ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত এই উল্কাপাত সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে। শহরের আলোক দূষণ থেকে দূরে, অন্ধকার কোনো জায়গা থেকে আকাশের দিকে তাকালে খালি চোখেই এই মহাজাগতিক আতশবাজি উপভোগ করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
ডিবিসি/এমইউএ