বাংলাদেশ

১৮৬ দিন গুম ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ৩০শে আগস্ট ২০২৫ ১১:১০:২৯ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানাকে ২০১৫ সালে উত্তরা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর টানা ১৮৬ দিন তাকে অজ্ঞাত স্থানে গোপনে আটকে রেখে চালানো হয় অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এর মধ্যে শেষ দুই মাস তাকে কাটাতে হয়েছে একটি অন্ধকার ও দুর্গন্ধময় শৌচাগারে।

শুক্রবার (৩০শে আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সোহেল রানা। 

 

তিনি বলেন, সেখানে মানুষের ন্যূনতম মর্যাদা ও বেঁচে থাকার মৌলিক শর্তগুলো থেকেও আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দিন-রাত মশার কামড়, শারীরিক অত্যাচার, ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুভয়ের মধ্যে আমি প্রতিদিন টিকে ছিলাম। সেই ভয়াল অভিজ্ঞতা আজও আমার জীবনকে তাড়া করে বেড়ায়।

 

গুম থেকে ফিরে আসার পর সোহেল রানা এটিকে কেবল নিজের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি হিসেবে না দেখে একে জাতির জন্য এক গভীর সংকট হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, গুম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি জাতির মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার একটি ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি।

 

এই উপলব্ধি থেকে তিনি গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে প্রথম মামলা দায়ের করেন। একইসাথে তিনি গুমকে সরাসরি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে সোচ্চার হন এবং আইনজীবী সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টিকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসেন।

 

পাশাপাশি, প্রতিটি ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য সত্য উন্মোচন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ও কার্যকর ‘গুম কমিশন’ গঠনের দাবিও তোলেন তিনি। কেবল দেশেই নয়, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমে তিনি ধারাবাহিকভাবে গুমের বিষয়টি তুলে ধরে বিশ্ব জনমত তৈরির চেষ্টা করেন।

 

আইনজীবী সোহেল রানা মনে করেন, এই সংগ্রাম তার ব্যক্তিগত প্রতিশোধ বা বেদনার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব।

 

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ২০২৩ সালে ধামরাই থেকে গুমের শিকার রহমত উল্লাহ, ২০১২ সালে গুম হওয়া বরিশালের ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খানের স্ত্রী আমেনা আক্তার এবং ২০১২ সালে রাজধানী থেকে গুম হওয়া মুকাদ্দাসের চাচা আবদুল হাই।

 

ডিবিসি/এএমটি

আরও পড়ুন