আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, এশিয়া, ফুটবল

২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ কাতার সম্পর্কে মানুষ কতটা জানে?

রূপক বিধৌত সাধু

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২৩শে নভেম্বর ২০২২ ০৩:৫৮:১৯ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ কাতার। কাতারে অসাধারণ বেশ কয়েকটি স্টেডিয়াম রয়েছে। মোট ১২ টি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা হওয়ার কথা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ। আমরা এই দেশ সম্পর্কে ঠিক কতটুকু জানি?

 

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট এক দেশ কাতার। আয়তন মাত্র ১১,০০০ বর্গ কি.মি.। লম্বা-লম্বি এ-মাথা ও-মাথা পাড়ি দিতে বড়োজোড় ২ ঘণ্টার মামলা। দক্ষিণে সৌদি আরব এবং পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। রাজধানীর নাম দোহা। জনসংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ। দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড়ো মজুদ রয়েছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

আরবি কাতারের সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় ৫৬% লোক আরবি ভাষায় কথা বলে। গত দশ বছরে বিপুল পরিমাণে বিদেশি শ্রমিক কাতারে এসেছে। এখানে একজন অভিবাসী শ্রমিকের মাসিক আয় ৩৫০ ডলার।

গত এক দশকে লন্ডনে প্রচুর সম্পদ কিনেছে কাতার। কয়েকমাস আগে কাতারের অর্থমন্ত্রী বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, যুক্তরাজ্যে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫ থেকে ৫১ বিলিয়ন ডলারের মতো। ছোট্ট এ দেশটিতে তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুতের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

 

কাতারের মাথাপিছু আয় ৮৮ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার (প্রায় ৭৪ লাখ টাকা)। কাতারের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ। মাথাপিছু আয় ৮১ হাজার ৪৬৬ ডলার।

কাতারের মুদ্রার নাম 'রিয়াল'। বাংলাদেশের প্রায় ২৮ টাকার সমান। দেশটার তিন দিকেই সাগর। প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো বর্ডার সৌদি আরবের সাথে। আর আছে আরব আমিরাত। দুই দেশের সাথেই স্থলপথে সংযোগ আছে। হজ্জ্বের সময় সবাই এ দেশ থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে সৌদি চলে যায়। 

 

কাতারের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ কাতারের বাসিন্দা। আর বাকি ৮৬ শতাংশ লোকই বিদেশী। এক সময় এদের প্রধান জীবিকা ছিল সাগরে মাছ ধরা। এর পর মুক্তার চাষ। তেল আবিস্কারের পর এরা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিগুলোর একটি। এখন এদেশে নিজস্ব জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বিদেশি। সবচেয়ে বেশি লোক ভারতীয় উপমহাদেশের। তাই আরবীর পরেই এদেশে হিন্দির স্থান।

মধ্যপ্রাচ্য মানেই মরুভূমি। এ দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। পুরো দেশটাই স্রেফ মরুভূমি। এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট।

গাছপালা যে একদম নেই, তা নয়। প্রচুর পরিমাণে আছে খেঁজুর আর বরই গাছ। এদেশের বরই খুবই মজার। ধরেও প্রচুর পরিমাণে। বেশির ভাগ বাড়ির সামনেই একটা-দুটা বরই গাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু এরা নিজেরা এ বরই ছুঁয়েও দেখে না। বিদেশিরাই ইচ্ছেমতো নিয়ে খায়। কেউ কিছু বলে না। খেঁজুরের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সব রাস্তার পাশে শুধু খেঁজুর গাছ।

কাতারে ৪ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। নির্মাণ শিল্পে লেবার ভিসায় যেসব শ্রমিক এখানে আসে, এরা যে কি অমানবিক কষ্ট করে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠায়, দেশে বসে তা কল্পনা করা সত্যিই অসম্ভব!

কাতারে বিদেশি অভিবাসীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয়তা হিসেবে ভারত, নেপাল ও ফিলিপাইনের পরপরই অবস্থান বাংলাদেশের। এই বাংলাদেশি অভিবাসীদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী কাজ করছেন নির্মাণখাতে। পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে ভিসা বিহীন ভ্রমনের সুযোগ দিচ্ছে কাতার। ৮০ দেশের নাগরিকরা কেবল বৈধ পাসপোর্ট থাকলেই পাবেন এমন সুযোগ। অবশ্য তালিকায় নেই বাংলাদেশ।

বাংলাদেশি জনশক্তির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হওয়ার কারণে রেমিট্যান্সের বড় উৎস এখন কাতার। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়ে ৪১১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে কাতার থেকে এসেছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।

কাতার একটি রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশটি শিল্পকলার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। দেশটি নামী-দামী বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। কাতার আমিরের বোন চিত্রকর্মের জন্য বছরে এক বিলিয়ন ডলারের মতো ব্যয় করছে বলে জানা যায়।

 

 

 

আরও পড়ুন