বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ, অপরাধ

৬টি জুতার বাড়ি ও ৫ হাজার টাকায় শিশুকে যৌন নিপীড়নের বিচার দফারফা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ১৭ই মার্চ ২০২৫ ০২:৫৪:৫০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরে ৬ বছরের এক কন্যা শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ৪৭ বছর বয়সী বাবুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য মাতব্বররা ভুক্তভোগীর বাড়িতেই বসায় সালিশি বৈঠক। সালিশে ওই অভিযুক্তকে করা হয় ৬টি জুতাপেটা এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা।

জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির পরিবারকে জোরপূর্বক হাতে ধরিয়ে দেন মাতব্বররা। সালিশে আরও জানানো হয় মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত না মেনে থানা পুলিশ করলে শিশুটির পরিবারকে ছাড়তে হবে নিজ বসতভিটা। ঘটনাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের।


আরও জানা যায় সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত'র কাছ থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ৬ জন মাতব্বরের জন্য নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা ছয় জন মাতব্বরদের মধ্যে বণ্টনে ঘটে আপত্তি। চারজন মাতব্বর নেন ১ হাজার টাকা করে এবং দুইজনকে দেয়া হয় ৫’শ টাকা করে। টাকার সঠিক বণ্টন না পেয়ে মাতব্বররা এখন একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছেন অভিযোগ।


অভিযুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে।


ভুক্তভোগী শিশুটির নানী জানান, আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমার মেয়ে তার স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস করে। সেই সুবাদে তার ৬ বছরের কন্যা শিশুটি আমার কাছেই থাকে। গত জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ রোজ রবিবার আবদুল বারেকের ছেলে বাবুল মিয়া আমার নাতনির হাতে ১০ টাকা দিয়ে বলে চলো তোমাকে মজা কিনে দিবো। সে সরল বিশ্বাসে বাবুলের সাথে যায়। বাবুল একপর্যায়ে তাকে একটি ঘরের চিপায় নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। তাৎক্ষণিক আমার নাতনি বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে ঘটনাটি জানায়। এই ঘটনার পর চার দিন খুব অসুস্থ ছিল সে। বিষয়টি গ্রামের মাতবরদের কাছে জানালে তারা আমাকে পরামর্শ দেয় গ্রাম্য সালিশ ডাকার জন্য। আর যদি মাতব্বরদের কথা অমান্য করে থানা পুলিশ করি তাহলে আমার খুব ক্ষতি হতে পারে। এই ভয়ে ঘটনার ১৫ দিন পর আমি গ্রাম্য সালিশ ডাকি। সালিশে মাতব্বররা অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য কোন সাক্ষী প্রমাণ হাজির হতে দেয়নি। বিচারের রায় দেয়া হয় অভিযুক্ত বাবুলকে ৬টি জুতার বাড়ি এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা। বর্তমানে আমি শিশু সন্তানটি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। প্রতিনিয়ত বাবুলের পরিবার থেকে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে যদি মুখ খুলি তাহলে আমাকে গ্রাম ছাড়া করবে।


সালিশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাতব্বর বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীনকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে কাজ করেছে অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার পরিবার। সেই সুবাদে তাকে বাঁচানোর জন্য গ্রাম্য সালিশ ডেকে নামমাত্র জরিমানা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়। সালিশের পরে আবার অভিযুক্তর কাছ থেকে ইউপি সদস্য শাহীন সহ ৬ জন মাতব্বরের জন্য নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। সেই ৫ হাজার টাকা থেকে ইউপি সদস্য শাহিন, জাফর আলীর ছেলে বাবুল, সৈয়দ আলীর ছেলে বাবুল, শাহজালাল নেন ১ হাজার টাকা করে মোট ৪ হাজার টাকা। আর বাকি ১ হাজার টাকা দেয়া হয় কবির ও সাগরকে। যতদূর শুনেছি ওই মহিলাকে সালিশের পরে বলা হয়েছে যদি থানা পুলিশ করে তাহলে গ্রাম থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। এই ঘটনাটির সঠিক তদন্তসাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত।


ইউপি সদস্য শাহিন বলেন, বিচারে আমি উপস্থিত ছিলাম আর বিচারের জুড়ি বোর্ডের রায়ে সম্মতি প্রদান করেছি মাত্র। বিচার পরিচালনা করেছে গ্রামের মুরুব্বীরা আর সালিশি জুরি বোর্ড পরিচালনা করেছেন ছন্দু মিয়া, রেনু মিয়া, সাগর, রাজু ও কবির। পরে বিচারের রায় অনুযায়ী অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে তার বড়ভাই তাহের মিয়া জুতাপেটা করেন এবং জরিমানার ৫ হাজার টাকা শিশুটির নানীর হাতে বুঝিয়ে দেন।


ডিবিসি/এএনটি

আরও পড়ুন