বাংলাদেশ, অর্থনীতি, জেলার সংবাদ

৬ মাসেই কেরুর অ্যালকোহল বিক্রি থেকে আয় ২৩৩ কোটি টাকা

কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ২৯শে জানুয়ারী ২০২৩ ০৫:০০:৪৬ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

৮৩ বছরের পুরানো দেশীয় একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানী ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ মাসেই ডিস্ট্রিলারী (অ্যাকোহোল) থেকে আয় করেছে ২৩২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। কোম্পানিটির একটি অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট থেকে এরকম তথ্য পাওয়া গেছে।

কোম্পানির তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অ্যালকোহল বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ২৩২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় হয়েছিল ১৯২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে। আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ। 

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে পুরো সময়ে কেরুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ অ্যালকোহল বিক্রির রেকর্ড ছিল কোম্পানিটির। সেই সময় কোম্পানিটি আয় করে ৪২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ওই বছর চিনিকল, রাজস্ব আদায় ও কোম্পানি পরিচালনাসহ সব খরচ বাদে কোম্পানি প্রকৃত মুনাফা করে ৬৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তার আগের ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরে অ্যালকোহল বিক্রি করে আয় হয়েছিল ৩১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। চিনিকলসহ বিভিন্ন বিভাগের লোকসান সমন্বয় করে লাভ করে ২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে এই আয় আরও বাড়বে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়িয়েছে একই সঙ্গে দেশজুড়ে বিক্রয় ও বিক্রয় কেন্দ্র বাড়িয়েছে।

দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ৮৪ বছরের পুরনো একমাত্র অ্যালকোহল উৎপাদনকারী কেরু মোট ৯টি ব্রান্ডের অ্যালকোহল উৎপাদন করে থাকে। এর মধ্যে বর্তমানে ৮টি ব্রান্ডের অ্যালকোহল বাজারে বিক্রি হচ্ছে আর একটি ব্রান্ডের কাচামালের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

দর্শনা কেরু এন্ড কোং ম্যানেজার (প্রডাকশন) ফরেনলিকার রাজিবুল হাসান জানান, প্রতিষ্ঠানটি ১৮০ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে। কেরু তিনটি সাইজের ৮টি ব্রান্ডের মদ বাজারজাত করছে। এগুলো হলো- ভদকা, ফাইন ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, চেরি ব্র্যান্ডি, অরেঞ্জ কুরাকাও, কোল্ড রিবন জিন, ওল্ড রাম ও রোসা রাম।

কোম্পানিটির হিসাব অনুযায়ী, প্রতিমাসে প্রায় ২১ হাজার কেসেরও বেশি অ্যালকোহল বিক্রি করছে কেরু। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি এবং ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি বোতল থাকে। কেরুর উৎপাদিত অ্যালকোহল বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। গত বছর কোম্পানি প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস বিক্রি করেছিল। বিগত ৬ মাসে গড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার কেস বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশে কেরুর ১৩টি ওয়্যারহাউস ও ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে কক্সবাজারে একটি নতুন বিক্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ ছাড়া রূপপুর ও কুয়াকাটায় ১টি করে বিক্রয় কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে ১টি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করেছে কেরু।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমানে বিদেশি মদ আমদানিতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে।

কেরুর কর্মকর্তারা বলছেন, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত কারখানা আরও বেশি উৎপাদনে সক্ষম। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ নিয়ে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। অ্যালকোহলের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি।

কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, কেরুর উৎপাদন আন্তর্জাতিক মানের। দেশি বাজারে চাহিদা বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে ১০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্প শেষ হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করা হবে। উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়ে দ্বিগুণ হবে।

আরও পড়ুন