বাংলাদেশ, জাতীয়, অর্থনীতি

১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ২৩শে মে ২০২৩ ০৬:২৭:২৪ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে সরকারি চাকরিজীবীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিতে পারেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ বিভাগ কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ৫ শতাংশ। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কিছুটা কম। মূল্যস্ফীতির এ চাপ বিবেচনা নিয়ে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

সূত্র জানায়, বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বর্তমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে– এমন ঘোষণা থাকবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কী হারে বেতন বাড়বে, তা নির্ধারণের কাজ শুরু হবে জুনে বাজেট ঘোষণার পর। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে গেজেট জারি হতে পারে। তবে যখনই বেতন বৃদ্ধির গেজেট জারি হোক না কেন, তা জুলাই মাস থেকেই কার্যকর হবে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে নতুন পে স্কেলের দাবি ওঠে। এর প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেটে তাদের জন্য মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় সরকারি চাকরিজীবীর মোট পদসংখ্যা ১২ লাখ ৪৬ হাজার। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ তাদের বেতন-ভাতা বাবদ আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু মোট পদের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। ফলে বেতন-ভাতায় বরাদ্দের পুরো অর্থ আগামী অর্থবছর ব্যয় হবে না। তাই মূল্যস্ফীতির হার সমন্বয়ের ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের যে পরিমাণ বেতন বাড়বে, তা এই বরাদ্দ থেকেই দেওয়া সম্ভব হতে পারে। কিংবা বাড়তি খরচ হলেও তার পরিমাণ খুব কম হবে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছর থেকেই বিভিন্ন খাতে ব্যয় সাশ্রয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা রাখা হয়। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বেতন স্কেল ঘোষণা করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন শতভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর জুলাইয়ে কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। তবে ওই বেতন স্কেলে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ জন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলেও চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ হারেই ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বাজেট ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রী বা অর্থ সচিব এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর জন্য পয়েন্ট টু পয়েন্ট নাকি বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করা হবে– সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা চাইবেন তারা। এছাড়া ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়বে কিনা, সে বিষয়েও নির্দেশনা চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার ভিত্তিতেই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গত মে-এপ্রিল ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে সরকারি হিসাবে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ছিল।

ডিবিসি/রূপক

আরও পড়ুন