বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ, ভারত

‘আমার বাপ-ভাই সবাই ভারতীয়, তবুও বিএসএফ কথা শুনেনি’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ২৬শে জুন ২০২৫ ১০:৩১:৩৫ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অসহায়ভাবে বসে আছেন এক যুবক। চোখে-মুখে গভীর হতাশা আর ক্লান্তি। তার নাম রহম আলী। নিজেকে ভারতের আসাম রাজ্যের নগাঁও জেলার বাসিন্দা দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাপ-ভাই সবাই ভারতীয়, এখানকারই ভোটার। সব কাগজপত্র আমাদের আছে। তবুও বিএসএফ আমাদের কথা শুনেনি।”

রহম আলীর অভিযোগ, ভারতের নাগরিকত্বের সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে (পুশ ইন করেছে)। ঈদের কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় তিনি ভারতে থাকা তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। সেই থেকে তিনি বাংলাদেশেই আশ্রয়হীন অবস্থায় এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।


বুধবার (২৫শে জুন) রাতে পাটগ্রাম স্টেশনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রহম আলী জানান, তিনি আসাম রাজ্যের নগাঁও জেলার জুড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মাসুদের ছেলে। 
 

তিনি আরও জানান, ঈদের কয়েকদিন আগে বিএসএফ সদস্যরা তাকেসহ আরও কয়েকজনকে তাদের ঘর থেকেই তুলে আনে। কোনো কথা বা পরিচয়পত্র দেখার সুযোগ না দিয়েই তাদের খালি গায়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে তিনি কার্যত একজন রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হয়েছেন। স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

 

পাটগ্রাম স্টেশনের চা-দোকানি রমজান আলী বলেন, “কয়েকদিন ধরেই লোকটাকে স্টেশনে ঘুরতে দেখছি। খুব অসহায় লাগছিল। পরে শুনলাম ইন্ডিয়া থেকে বিএসএফ নাকি পাঠাই দিছে। আহা রে! মানুষটা তার বউ-বাচ্চার জন্য কান্নাকাটি করতেছে। এই লোকগুলো কই যাবে, কী খাবে? সরকারের এই বিষয়গুলো দেখা উচিত।”


এই বিষয়ে পাটগ্রামের সমাজকর্মী আজমল হোসেন বলেন, “এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। প্রায়ই আমরা দেখি বিএসএফের তাড়া খেয়ে বা জোরপূর্বক ঠেলে দেওয়া অসহায় মানুষজন স্টেশনে বা বাজারের আশেপাশে ঘুরছে। রহম আলীর ঘটনাটি তেমনই একটি উদাহরণ। একজন মানুষকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে, তার পরিচয় কেড়ে নিয়ে অন্য একটি দেশে ঠেলে দেওয়া চরম অমানবিক কাজ এবং এটি সরাসরি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আমরা চাই আমাদের প্রশাসন ও বিজিবি যেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখে এবং দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করবে।”


এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন,  পাটগ্রাম স্টেশনে একজন ভারতীয় নাগরিক দাবি করা একজন ব্যক্তি রয়েছে। আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডকে অবগত করেছি। ওই ব্যক্তিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিজিবি।


ডিবিসি/এএনটি

আরও পড়ুন