বিবিধ, শিক্ষা

‘কথাসাহিত্যেও রয়েছে কাজী নজরুলের জীবনী'

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ১লা মার্চ ২০২৩ ১২:৩২:১৯ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

‘কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা এবং গান নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, সেই তুলনায় তাঁর গল্প-উপন্যাস নিয়ে কম পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব নজরুলকে বেশি খুঁজে পাওয়া যায় কথাসাহিত্য ও তার লেখা চিঠিতে। তাই ব্যক্তি নজরুলকে অন্বেষণ করতে হলে তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে।’


কথাগুলো বলছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক অধ্যাপক ড. মো. রিজাউল ইসলাম। 

 

সম্প্রতি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ব্যথার দান’ নিয়ে এই গবেষকের একটি গবেষণা প্রবন্ধ শাবিপ্রবি’র সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ‘নজরুলের আত্মানুসন্ধান : প্রসঙ্গ ব্যথার দান’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি বিশ্লেষণাত্মক ও তুলনামূলক পদ্ধতি অনুসরণে প্রণীত।  প্রবন্ধটিতে ‘ব্যথার দান’ গল্পগ্রন্থের ৬টি গল্পে কাজী নজরুল ইসলাম নিজেকে কীভাবে যুক্ত করেছেন- সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। 


গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ‘নজরুলের গল্প এবং উপন্যাসে এমন কিছু নাম ও চরিত্র আছে যাতে ব্যক্তি নজরুলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিফলন পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, ব্যথার দান গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্পও ‘ব্যথার দান’। এই গল্পে নায়ক-চরিত্র দারা ছাড়াও গল্পের অনেক ঘটনা ও বিষয় নজরুলকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। যেমন, গল্পে ঘটনার স্থান হিসেবে বেলুচিস্তানের গোলেস্তান, বুস্তান, চমন ইত্যাদি জায়গার উল্লেখ আছে। এসব জায়গায় সৈনিক নজরুলকে নানাবিধ কাজে যেতে হয়েছে। এছাড়া এই গল্পটি যখন লেখা ও প্রকাশ করা হয় তখনও নজরুল ৪৯ বেঙ্গলি পল্টনে হাবিলদার হিসেবে কাজ করছিলেন।’ 

দ্বিতীয় গল্প নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘হেনা’ গল্পের নায়ক সোহরাব যেমন ইংরেজের হয়ে মিত্রপক্ষে জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াই শেষে নিজ জন্মভূমি আফগানিস্তানে ফিরে এসেছে এবং পরবর্তী নিজ দেশের জন্য আফগানিস্তানের সৈন্যদলে যোগ দিয়ে ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তেমনি নজরুলেরও ইংরেজের হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ফিরে এসে ইংরেজকে এ দেশ থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা। এই গল্পের চরিত্র ও স্থানের আড়ালে যেন ব্যক্তি নজরুলই  দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এছাড়া গল্পগ্রন্থের তৃতীয় গল্প ‘বাদল-বরিষণে’— এর শ্যামল চরিত্রটির সঙ্গে নজরুলের সততা-সরলতা একাকার হয়ে মিশে গেছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। 

গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ‘ঘুমের ঘোরে’ গল্পের আজহার চরিত্রটির আর্থিক অবস্থা এবং অজানাকে জানার বাসনায় ব্যক্তি নজরুলেরই প্রতিফলন দেখা যায়। ‘অতৃপ্ত কামনা’ গল্পের নায়কের দুরন্তপনা নজরুলের বাল্যকালের ডানপিটে স্বভাবকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়া গল্পগ্রন্থের শেষ গল্প ‘রাজবন্দীর চিঠি’ নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এই গল্পটিতে নজরুলের অগ্রগামী পরিকল্পনার পূর্বাভাস পাওয়া যায়। ‘ব্যথার দান’ গল্পগ্রন্থের গল্পগুলোর কাহিনী ও চরিত্র বিভিন্নভাবে ব্যক্তি নজরুলকে দস্তুর মতো প্রতিনিধিত্ব করছে বলে গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। 

অধ্যাপক ড. মো. রিজাউল ইসলাম বলেন, ‘কথাসাহিত্যে ব্যক্তি নজরুলকে অন্বেষণের চেষ্টা করেছি। কাজী নজরুল ইসলামের তিনটি উপন্যাস ‘বাঁধন–হারা', ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘কুহেলিকা’ এবং তিনটি গল্পগ্রন্থের—‘ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’ ও ‘শিউলি–মালা’— ১৮টি গল্প নিয়ে আমার থিসিস। নজরুল তার কথাসাহিত্যের মধ্য দিয়ে কীভাবে নিজেকে চারিত করেছে সেই বিষয়টি সামগ্রিকভাবে আমার থিসিসে তুলে ধরা হয়েছে। ওই বিস্তৃত কাজের একটি খন্ডচিত্র ‘‘নজরুলের আত্মানুসন্ধান : প্রসঙ্গ ব্যথার দান’’ গবেষণা প্রবন্ধটি।’

আরও পড়ুন