বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, ইউরোপ

ভারতে দালাল সিন্ডিকেটের কারণে পরিবার নিতে পারছেন না বাংলাদেশি গ্রিস প্রবাসীরা

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ১৯শে জুন ২০২৫ ০৯:৪৪:৫৫ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

উন্নত জীবন, নিরাপদ ভবিষ্যৎ আর প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে হাজারো বাংলাদেশি পাড়ি জমান ইউরোপের দেশ গ্রিসে। কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত সাফল্যও তাদের জীবনে পূর্ণতা আনতে পারছে না, কারণ পরিবারকে পাশে পাওয়ার স্বপ্নটি আটকে আছে ভিসা জটিলতার এক দুর্ভেদ্য দেয়ালে। এই সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশে গ্রিক দূতাবাসের অনুপস্থিতি এবং ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত দূতাবাসে পদে পদে হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ, যা গ্রিস প্রবাসীদের আনন্দময় জীবনকে একাকিত্বের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।

গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিযোগ, ভারতে রয়েছে দালাল সিন্ডিকেট। ঠিক মতো দালাল না পেলে কোনো কাজই হয়না। ভারতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নানান তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হয়। গ্রিসের বাংলাদেশিদের কাছে যেনো ভারত এক দুঃখের নাম। গ্রিসে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর পথে-প্রান্তরে শুধু ভারতের বিরুদ্ধে দুঃখগাথা। অনেক গ্রিস প্রবাসীই ২০-২৫ বছর ধরে গ্রিসের স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অথচ পরিবার নিতে পারছেন না। গ্রিসে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সিংহভাগই গার্মেন্টস, রেস্তুরা ও কৃষি কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

 

গ্রিস প্রবাসী জসিম উদ্দিনের ভাষ্যে এ দেশে বর্তমানে আয় রোজগার ভালো করতে পারলেও তাদের সুখ নেই। কারণ পরিবার-পরিজন ছাড়া যাপিত প্রবাস জীবন যেন নিসঙ্গতায় মোড়া। প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ইনকাম করেও সবার চোখে যেন হতাশার ছাপ।
 

গ্রিসের বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক লোক মোহাম্মদ করিম মিয়া। তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘নিজের ছেলে ও পরিবার আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। তাদেরকে ভারতেও পাঠিয়েছেন, সেখানে দুই মাস থাকার পরও ভিসা করাতে পারেননি। ভারতে দালাল চক্র অনেক টাকা চায়। দালাল না ধরলে অ্যাপয়েন্টমেন্টই মিলে না ভিসা পাওয়া তো দূরের কথা।’

 

সুহেল মিয়া নামের আরেক প্রবাসী বলেন, ‘১০ বছর ধরে গ্রিসে আছেন, কিন্তু এতোদিন বৈধতা ছিলনা তার। কিন্তু ২০২২ সালে বৈধ হয়ে দেশে গিয়ে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিজের কাছে গ্রিসে নিতে চান। কিন্তু পরিবার নিতে যা ডকুমেন্ট প্রয়োজন সকল নথি জোগার করে ভারতে গিয়ে সকল নথি সত্যায়িত করার কোনো সুবিধা করতে পারেননি। তার অভিযোগ, ভারতের গ্রিস দূবাতাসের দূভাষীসহ বিভিন্ন পদে ভারতের নাগরিক নিযুক্ত রয়েছে। তারা বাংলাদেশিদের ফাইল দেখলেই ফেলে দেয়। নথি সত্যায়িত করার আবেদনও ফেলে রাখে বছরের পর বছর। ভারতীয়রা গ্রিসের কর্মকর্তাদের আবেদনকারী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রদান করে। ফলে আবেদন এখানেই আটকে যায়।

গ্রিসে অনেক নারীও রয়েছেন স্বামী ছাড়া। তারা লেবাননসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়েছেন গ্রিসে। কিন্তু স্বামীকে নিতে পারছেন না। তাদেরই একজন আখি বেগম। তিনি ৫ বছর আগে বৈধ হলেও স্বামী ও সন্তানকে নিজের কাছে নিতে পারছেন না।

 

গ্রিসের আইন অনুযায়ী, একজন বৈধ অভিবাসী তার স্ত্রী এবং সন্তানদের পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসায় দেশটিতে নিতে যত শর্ত দেয়া হয়েছে তার সব শর্ত পূরণ করেও পরিবার আনতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রবাসীদের। গ্রিসে পরিবার আনা যেন সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই। আইনি জটিলতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও আনতে পারছেন না পরিবার। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াটি সহজ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ প্রবাসীদের।

 

বর্তমানে গ্রিসে বসবাসরত একজন বৈধ অভিবাসীকে পরিবার আনতে হলে প্রথমে সকল নথি সত্যায়িত করে ঢাকায় গ্লোবাল ভিএফএস অফিসে জমা দিতে হয়। কেউ চাইলে সরাসরি দিল্লিতেও নিয়ে দিতে পারে। ভিএফএস যাবতীয় অনুসন্ধান করে এই আবেদন ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাসে পাঠায়। গ্রিক দূতাবাস সব নথি ও আবেদন সত্যায়িত করতে মাসের পর মাস চলে যায়। গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয় এবং ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাসের মাধ্যমে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। ত্রিমুখী ফাইল চালাচালির জটিল প্রক্রিয়ার কারণে নানা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন প্রবাসীরা। তবে এখানে দালাল সিন্ডিকেটের কারণে এসব হয়রানি হচ্ছে বলে মনে করেন প্রবাসীরা।


বাংলাদেশে দূতাবাস চালু করতে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রবাসীদের প্রতি আরো আন্তরিক হবেন বাংলাদেশ সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

 

ডিবিসি/আরএসএল 

আরও পড়ুন