বিনোদন, সংস্কৃতি

‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’-গানটির পটভূমি

ডেস্ক রিপোর্ট

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ১৬ই আগস্ট ২০২৩ ০৬:৪৩:০৯ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বছরের বিভিন্ন সময়, বিশেষত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যুদিনে অলিগলি-রাজপথ কিংবা মানুষের বাড়িতে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানটি বেজে উঠে বারবার। টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয় গানের ভিডিও, বেতারেও শোনা যায়। যেন জাতীয় শোক দিবসের থিম সং এটি!

গানটির গীতিকার হাসান মতিউর রহমান ও দুই গায়ক মলয় কুমার গাঙ্গুলী ও সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে আলাপকালে তিনজনই জানিয়েছিলেন, তাঁদের সংগীতজীবনের স্মরণীয় সংযোজন এই গান। এই গানের সুবাদে বছরের পর বছর অসংখ্য মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন তাঁরা।

হাসান মতিউর রহমান জানান, গানটি লেখা হয় ১৯৯০ সালে। আমি তখন থাকতাম ঢাকার সিপাহীবাগে। ভাড়া বাসায়। মলয় কুমার গাঙ্গুলী আমাকে ফোনে বিষয়টি বিস্তারিত জানালেন। ওই রাতেই লিখতে বসি। কিন্তু অনেক ভেবেও শুরু করতে পারছিলাম না। সারা রাত কেটে গেল। চোখে ঝিমুনি। ভোরের দিকে একটা সূত্র পেলাম। মনে হলো, বঙ্গবন্ধু তো একজন মহান মানুষ, জনগণের বন্ধু। তিনি কখনো মরতে পারেন না। তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। এসব ভাবতে ভাবতে লিখে ফেললাম, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই/ যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই! এতে কল্পনায় বঙ্গবন্ধুকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে, তেমনি জেল থেকে তাঁকে মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। লিখতে লিখতে আবেগে ঘন ঘন শিহরিত হচ্ছিলাম।

শেষ প্যারায় লিখলাম, ‘কে আছে বাঙালি তাঁর সমতুল্য/ ইতিহাস একদিন দেবে তাঁর মূল্য/ সত্যকে মিথ্যার আড়াল করে যায় কি রাখা কখনো তা।’ এরপর পুরো গান শেষ করি। এক বসাতেই সেদিন গানটি লিখে ফেলেছিলেন হাসান মতিউর রহমান। সকাল ১০টায় মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে মলয় কুমার গাঙ্গুলীর বাসায় নিয়ে যান গানটি। হাসান মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তাঁকে লেখাটা দিই। বেশ কয়েকবার পড়ে তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়লেন সুর করতে।’

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘এক বসায় ১৫ মিনিটে গানটি সুর করে ফেলেছিলাম। গানের সুর করতে করতে আমার স্ত্রী, গীতিকার হাসান মতিউর—আমাদের তিনজনের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরেছে। পরে আমি ফ্রান্সে একটি অনুষ্ঠানে গানটি গাই। এক বছর পর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সামনে এ গান গাই। তিনিও কেঁদে ফেলেন। এরপর অনেকবার তাঁকে এ গান শুনিয়েছি।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর মলয় কুমার গাঙ্গুলীর মধ্যে এক ধরনের তীব্র যন্ত্রণা কাজ করত। তিনি জানান, সেই যন্ত্রণারই বহিঃপ্রকাশ এ গান। তিনি বলেন, ‘এ গান আমি সুর করেছি এবং আমি নিজে গেয়েছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমার এ গান প্রতিবাদের ভাষারূপে প্রতিধ্বনিত হবে।’

১৯৯০ সালে গানটি মলয় কুমার গাঙ্গুলী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইলেও রেকর্ডিং হয়েছে ১৯৯১ সালের শুরুর দিকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল তখন। ওই সময় এ গানের সঙ্গে আরও কিছু গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ ‘জনতার নৌকা’ নামে একটি অ্যালবাম বের করে হাসান মতিউর রহমানের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনা সুর।

১৯৯৭ সালে গানটি সাবিনা ইয়াসমীনকে দিয়ে আবার গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেবার গানটির সংগীত পরিচালনা করেন ফরিদ আহমেদ। গানটি নিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন জানান, এ গান আমার হৃদয়ের খুব কাছের। এটি গাইতে পেরে আমি গর্ববোধ করি। এখনো মনে আছে প্রচুর সাড়া পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ গান শুনে প্রশংসা করেছিলেন। গানটি আমার সংগীতজীবনের সেরা একটি অর্জন হয়ে আছে।

যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন