আন্তর্জাতিক, আমেরিকা

মানুষের মাংস দিয়ে বার্গার বানিয়ে খেতেন যে সিরিয়াল কিলার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মানুষ হত্যা, তারপর টুকরো টুকরো করে কেটে বার্গার বানিয়ে খাওয়া! ভাবতে পারেন এমন কিছু? এমনই বিভৎস কাণ্ড করতেন জো মেথেনি নামে এক সিরিয়াল কিলার।

জ্যাক দি রিপারের নাম শুনেছেন? যে কিনা বেছে বেছে যৌনকর্মীদের হত্যা করতেন। তৎকালীন সময়ে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের এক আতংকের নাম।  খুবই নৃশংস ছিল তার হত্যার ধরন। কে ছিল সেই জ্যাক দ্য রিপার, তা আজও ধোঁয়াশা।

সিরিয়াল কিলারদের তালিকায় থাকা জো মেথেনি তার শিকারদের হত্যার পর তাদের মাংস দিয়ে বার্গার বানিয়ে খেতেন। হ্যাঁ, এমনটাই করতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিরিয়াল কিলার। প্রথম খুনটা জো করেছিলেন ১৯৯৪ সালে একজন পতিতা নারীকে। ৩৯ বছর বয়সী ক্যাথি অ্যান ম্যাগাজিনা নামের সেই নারীর দোষ ছিল তিনি পতিতাবৃত্তি করেন। হত্যার পর জো যে কারখানায় কাজ করতেন, সেখানেই এক জায়গায় পুঁতে রাখেন তাকে।

ছয় মাস পর সেখান থেকে ওই নারীর দেহ তুলে ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দেন।

জো বেশিরভাগ হত্যা করেছেন মদ্যপ মানুষকে। তিনি খুনের পর মানুষের মাংস দিয়ে বার্গারের পেটি তৈরি করতেন। এরপর নিজেই সেটি খেতেন। এমনকি শূকরের মাংসের সঙ্গে মাঝে মাঝে মিশিয়ে দিতেন মানুষের মাংস।

রাস্তার পাশে তার একটি খাবারের দোকান ছিল। এরপর এসব খাবার এবং মাংস পথচারীদের কাছে বিক্রি করতেন নৃশংস এই মানুষটি। মেথেনি তার এক স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, তার বিক্রি করা মাংস বা খাবারের জন্য কোনো ক্রেতা কখনও কোনো অভিযোগ করেননি। বরং বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন বার্গারের স্বাদে খানিকটা বৈচিত্রের জন্য।

তার মতে, শূকরের মাংসের সঙ্গে মানুষের মাংসের বেশ মিল আছে।

যখনই তার মানুষের মাংসের প্রয়োজন পড়ত, তখনই তিনি ভবঘুরে কাউকে হত্যা করতেন। মোট ১৩টি খুন করেছেন জো। এদের মধ্যে বেশিরভাগি ছিল মদ্যপ, মাদকাসক্ত এবং পতিতা। অন্যান্য সিরিয়াল কিলারদের মতো জো মেথেনিরও হত্যার ধরন ছিল একই রকম।

গলা টিপে অথবা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করত সে। এরপর মৃতদেহ হয় মাটিতে পুঁতে ফেলতেন। আর তা সম্ভব না হলে রান্না করে খেতে নিতেন। জো নিজের স্ত্রী এবং ছেলেকেও হত্যা করেন।

এরপর তাদের মরদেহ নদীতে ফেলতে গিয়ে এক জেলের কাছে ধরা পড়ে যান। নিজেকে বাঁচাতে সেই জেলেকেও হত্যা করার পর নদীতে ফেলে দেন। এসব কথা ১৯৯৭ সালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজেই স্বীকার করেন তিনি।

এই ভয়ংকর জোসেফ মেথেনির জন্ম ২ মার্চ ১৯৫৫ সালে বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ড অঞ্চলে। মেথেনি ছোটবেলা থেকেই খানিকটা অবহেলিত হয়ে বড় হয়েছেন। তার বাবা ছিলেন মদ্যপ। মেথেনির যখন ছয় বছর বয়স, তখন তিনি মধ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান।

সংসার চালাতে গিয়ে মেথেনির মাও বেশিরভাগ সময় কাজে বাইরে থাকতেন। সেজন্য ছেলেকে বেশি সময় দিতে পারতেন না তিনি। মেথেনির আরও পাঁচ ভাইবোন ছিল। বলতে গেলে এই বাচ্চাগুলো বাবা মা ছাড়া ছন্নছাড়া একাকীই বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই দরিদ্র্যতার সঙ্গে লড়েছেন তিনি। পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে কখনো রেস্তোরাঁয় খাবার সার্ফ করেছেন কখনো বা খাবারের ট্রাক চালিয়েছেন।

১৯৭৩ সালে যখন মেথেনির ১৮ বছর বয়স তখন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনীতে যোগদেন। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন জার্মানিসহ ভিয়েতনামে সফর করেছেন।

সেখানে আর্টিলারি ইউনিটে থাকাকালীন হেরোইন আসক্ত হয়ে পড়েন মেথেনি। এরপর চাকরি চলে যায় মেথেনির। মেথেনির ৬ ফিট ১১ ইঞ্চি উচ্চতা অন্যদের থেকে খানিকটা আলাদা করেছিল। তার ওজনও ছিল অনেক বেশি।

চাকরি থেকে চলে আসার পর মেথেনি মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

কোকেইন, হেরোইন এবং অ্যালকোহলে ব্যয় করেন জমানো সব অর্থ। সেই সঙ্গে খানিকটা উদ্ভ্রান্ত জীবনযাপন করতে থাকেন। এ কারণে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আবার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। এরপর স্ত্রী এবং ছেলেকে গলা টিপে হত্যা করেন মেথেনি।

ততদিনে মানসিকভাবে যে পুরোপুরি বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন, তা বলতে আর বাকি থাকে না। তবে মেথেনি তার স্ত্রী এবং ছেলের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে থানায় ডায়েরিও করেছিল।

১৯৯৫ সালে বাল্টিমোরের হ্যানোভার স্ট্রিট ব্রিজের নিচে গৃহহীনদের এক ক্যাম্পে র্যাডাল ব্রুয়ার এবং র্যান্ডি পাইকারকে কুড়াল দিয়ে হত্যা করে মেথেনি।

এই হত্যার দায়ে অবশ্য মেথেনিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। সেসময় তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে প্রমাণ না পাওয়ায় এবং মেথেনির নির্লিপ্ত ব্যবহারের জন্য এক বছর নয় মাস পরই তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান।

১৯৯৬ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আবারও হত্যার নেশা পেয়ে বসে থাকে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কিথারলি লিন স্পাইসার নামে এক নারীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন মেথেনি। কিথারলিও ছিলেন একজন পতিতা এবং মাদকাসক্ত নারী। মেথেনি প্রথমে তাকে অপহরণ করে, এরপর ধর্ষণ ও হত্যা করে। মেথেনি একটি কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন। সেখানেও এক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার জন্য পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

তবে এবারও কোনো প্রমাণ না থাকায় ছাড়া পেয়ে যান মেথেনি।

পুলিশ জানায়, জোসেফ মেথেনি একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ। তিনি বেছে বেছে সাদা চামড়ার যৌনকর্মীদের হত্যা করতেন। যারা হেরোইন এবং কোকেনের আসক্ত, এমন নারীদের শিকার হিসেবে বেছে নিতেন মেথেনি। হত্যাকাণ্ডের সময় পাশবিক যৌন নির্যাতনও করতেন তিনি।

সবশেষ মেথেনি টনি লিন ইনগ্রাসিয়া নামের ২৮ বছর বয়সী এক তরুণীকে হত্যা করে। আর সেই অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় মেথেনি একবারও পালানোর চেষ্টা করেনি। বরং খুব স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে ধরা দিয়েছে পুলিশের কাছে।

বাল্টিমোর পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে এই নরপিচাশের কথা জানতে পারে বিশ্ববাসী। শিউরে উঠতে থাকে তার কার্যকলাপের বর্ণনা শুনে।

১৯৯৭ সালে কেম্পার মামলায় তার বিচার হয়। অপহরণ এবং যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করার জন্য ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। অন্যদিকে স্পাইসর হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ম্যাগাজিনারকে হত্যা এবং ছিনতাইয়ের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।

এমনকি সেই মামলায় আইনজীবীরা তার মৃত্যুদণ্ড চাইলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগেই ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট তিনি মারা যায়। ৬২ বছর বয়স হয়েছিল তার। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি হার্ট অ্যাটাকে কারাগারেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

সূত্র: অ্যামিউজিন প্ল্যানেট

আরও পড়ুন