আন্তর্জাতিক, আরব

সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করেছিলেন যিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২১শে জুন ২০২৩ ০৯:৩৮:১২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

হজ ও ওমরাহ পালনকালে তাওয়াফ করা আবশ্যক। ৭ বার পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ করাকে এক তাওয়াফ হিসেবে ধরা হয়। মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, মক্কায় বেশ কয়েকবার বন্যা হলেও তাতে সাঁতার কাটার মতো পানি ছিল না। তাই বৃষ্টির মধ্যে পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে দেখা গেলেও বন্যাকবলিত কাবাঘর সাঁতরে তাওয়াফের দৃশ্য বিরল। তবে সর্বশেষ ১৯৪১ সালে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সে সময় শায়খ আলি আল-আওয়াদি নামে একজন সাঁতরে তাওয়াফ করেছেন।

সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়া সূত্রে জানা যায়, তখন ৭ দিনের অবিরত বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় মক্কা নগরী। মসজিদুল হারাম প্রায় ৬ ফুট পানির নিচে ডুবে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে কাবাঘর তাওয়াফ করেন বাহরাইনের ১২ বছর বয়সী সাঁতারু আলি আল-আওয়াদি। পরবর্তী সময়ে তার তাওয়াফ করার ছবি প্রকাশ পায়। ছবিতে তাকে মাকামে ইবরাহিম থেকে দেড় মিটার দূরত্বে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। আর তার বন্ধুরা কাবার দরজায় বসে রয়েছেন।

২০১৩ সালে কুয়েতের আল রাই টিভিকে স্মৃতিচারণা করে আল-আওয়াদি বলেছিলেন, ‘তখন আমি মক্কার একটি স্কুলে পড়ি। লাগাতার ৭ দিনের বৃষ্টিতে মক্কায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বন্যার পানিতে অনেক মানুষ মারা যায়। এমনকি বাড়িঘর, যানবাহন ও গবাদি পশু ভেসে যায়। সে সময় আমার দুই বন্ধু হানিফ ও মুহাম্মদ আল-তাইয়িব এবং শিক্ষক আব্দুল রউফের সঙ্গে আমি মসজিদুল হারামে যাই। পুরো কাবা প্রাঙ্গণ পানির নিচে ডুবে আছে। তখন আমি পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করি।’

সাঁতরে তাওয়াফ করার চিন্তা প্রসঙ্গে আল-আওয়াদি আরও বলেন, ‘মূলত আমি দক্ষ সাঁতারু ছিলাম। তাই প্রথমেই সাঁতরে তাওয়াফ করার চিন্তা আসে। আমরা ৪ জন পানিতে সাঁতার শুরু করি। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আমাদের থামাতে চেষ্টা করেন। পুলিশের শঙ্কা ছিল, আমরা সাঁতরে হাজরে আসওয়াদ চুরি করতে পারি। পুলিশকে শুধু ৭ বার তাওয়াফ করার কথা বলে আশ্বস্ত করি। পুলিশ গুলি করে কি না আমি সেই ভয়ে ছিলাম। পরে জানতে পারি পুলিশের বন্দুকে গুলিই ছিল না। তবে আমার মনে আনন্দের অন্ত ছিল না। কারণ, সাঁতরে তাওয়াফ করার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই বিরল। এদিকে আমার দুই বন্ধু কিছুক্ষণ সাঁতরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কাবাঘরের দরজায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।’

জানা যায়, মসজিদুল হারামের জাদুঘর ও বিভিন্ন পুরোনো ছবির দোকানে সাঁতরে তাওয়াফ করার দুর্লভ ছবিটি পাওয়া যায়। আল আওয়াদির ছেলে আব্দুল মজিদ অনেক বছর আগে বাবার দুর্লভ ছবিটি কিনে বাবাকে উপহার দেন। ২০১৫ সালে আল-আওয়াদি ৮৬ বছর বয়সে মারা যান।

ইসলামী ইতিহাসের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আগেও পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে অতিবৃষ্টি দেখা গেছে। মহানবী (সা.)-এর নবুয়তের আগে বৃষ্টির কারণে কাবাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পুনর্নির্মাণের পর মহানবী (সা.) হাজরে আসওয়াদ আগের স্থানে বসিয়ে ছিলেন। প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ বিন আল-জুবায়ের বিন আওয়াম (রা.) (মৃত্যু ৭৩ হিজরি) প্রথমবার কাবাঘর সাঁতার কেটে তাওয়াফ করেন।

ইবনে আবু আদ-দুনিয়া বর্ণনা করেন, ইবনে আজ-জুবাইর (রা.) সব ধরনের ইবাদত করেছেন। তিনি বন্যার মধ্যে কাবাঘর সাঁতরে তাওয়াফ করেছেন। প্রখ্যাত আলেম আল-বদর বিন জামাআহ (রহ.) (মৃত্যু ৭৩৩ হিজরি) সাঁতার কেটে তাওয়াফ করেছেন। তিনি প্রতি চক্কর সাঁতারের সময় হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেছিলেন। (সিফাতুস সাফওয়াহ, পৃষ্ঠা : ৩০২/১; তারিখুল খুলাফা, পৃষ্ঠা : ১৮৭/১; কাশফুল খফা ওয়া মুজিলুল ইলবাস)

সূত্র : আল-আরাবিয়া

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন